Thursday, September 29, 2016

শারদীয়া চিরহরিত

শারদীয়া চিরহরিত


****************************************
শিল্পী - প্রাহনা বসু

****************************************
সম্পাদকীয়
আকাশে সাদা মেঘ ভাসলেই, রোদ্দুরে ধ রলেই কাঁচা সোনা রং এতটা বয়স হলো তবু নেচে ওঠে মন, মা আসছেন, মা আসছেন। মার সামনে চঞ্চলা কন্যাটি যেমন আগে আগে নেচে নেচে চলে তেমনি কাশের বনে নাচের ছন্দ বাজে। এত যে দূষণ পরিবেশে ও মানসে তবু সবকিছু ক্ষমা করে দিয়ে আগমনী আশ্বিনে অসুর- মহিষ- সিংহ আর ছেলেপুলে নিয়ে প্রতিবার হাসিমুখে মা ঠিক আসছেন। ঢাকের বাদ্যি আর শঙ্খনিনাদে যত ই  তোমাকে ডাকি এসো গো মা কল্যাণী বসো এই ঘরে, পোড়া মন তবু কেন বলতো মনে করিয়ে দেয় বার বার এবারেও রাখতে পারলাম না গো মা কথা - সৌহার্দের, সম্প্রীতির,শান্তির।

ঐ দেখ ক্ষমাসুন্দরী কেমন মুচকি হাসছেন, ঠিক হাসছেন।

এপ্রিলের চার তারিখে জন্ম নেওয়া আমাদের এই গ্রুপ টি দেখতে দেখতে সাত মাসে পা দিলো।অনেক অনুকূল প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে আজ আমরা শারদীয়ার দোর গোড়ায়।

একটি শারদ সংখ্যা প্রকাশের প্রস্তাব প্রথম রাখে সংঘমিত্র। সেই মতো গ্রুপের সবার কাছে লেখার আবেদন করেছিলাম। অভুতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। সকলেই নানা বিষয়ে লেখার ডালি সাজিয়ে নিয়ে এসেছে এই পুজোর মন্ডপে।

অতীতের সারণী থেকে কিছু অমূল্য রত্ন খুঁজে এনে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভজনদাকে।
সব ক টি ফুল এক মালিকায় গেঁথে সাজিয়ে দিলাম শারদ সংখ্যার আকারে।
সবাইকে শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা। পুজো সবার খুব ভালো কাটুক।সবাই খুশি থেকো আর সবাই কে খুশি রেখো।
ভালবাসাসহ,
দোলা সেন
উষ্ণা রায়
তনিমা হাজরা।

*****
 ইতিহাসের পাতা থেকে 
==================

:ব্যঙ্গ সংবাদ সাহিত্য সংকলন : : বৃশ্চিক : প্রথম চোট : দশম দংশন : পৃ:১৪ থেকে। 

চলন্তিকা প্রবোধ চৌধুরী নীতি ফিতি নিয়ে যখন খুব গাল গপ্পো চলছে, ' আমরা সবাই সতি - আমাদের এই সতির রাজত্বে '- এই রব যতই সরবে ঘোষিত হচ্ছে তখনই আমাকে একটি তৈলাক্ত খুঁটি ধরতে হয়েছিল একটা চাকরির জন্যে। দেখলাম পাউরুটির মত ফুলো ফুলো গাল, পুরুষ্টু পাঁঠার মত সুঠাম দেহ, পৃথুল পশ্চাৎদেশ, মস্তিষ্ক অবর্ণনীয় ; উনি প্রায় শীর্ষস্থানে অবস্থিত। দ্বারস্থ হয়ে আবেদন পেশ করলাম, ক্ষীণাকৃতি আবেদন পত্রটি দেখে একটু কঠিন হলেন। বিনয়ের ভান করে বললেন। ' লইজ্জা দেবেন না। আমি দুঃখিত। ' তাঁর জখমী উচ্চারনটাকে মেরামত করে দিয়ে বললাম ' লজ্জার কি আছে? ' এবার আর একটি খাম রাখলাম সন্তর্পনে। বাঁ হাতে ছুঁয়ে দেখলেন খুব হাল্কা নয়। এবার তাঁর মুখে হাসি ফুটল। বুঝলাম ওয়ান চুতে হবে না, টু, থ্রি, ফোর এবং আরো অনেক চু চাই। কমিশনই কি পারবে এই কমিশন বিজনেস ঠেকাতে? -------------------------------------- 

বাঁকুড়া থেকে ১৩৮০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হোত এই পত্রিকাটি। আনন্দ বাগচী, অবনী নাগ, বিবেকজ্যোতি মৈত্র ছিলেন গ্রন্থনায়। আজ তাঁরা তিনজনই আর আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তাঁরা আছেন, থাকবেন তাঁদের সৃষ্টিতে। সেই সময়ে (১৯৭৪ খৃ) বাঁকুড়া থেকে তাঁরা যে কাজ করে গেছেন তা আজ গবেষকদের গবেষণার বিষয়।

*****
শিল্পী - বালাজী
*****
কবিতা
ভজন দত্ত - র কবিতা
------------------------------
## সূচনা ##
দ্বন্দ্ব
স্থির না অস্থির

ফাৎনা
দাঁড়ালে
স্থির সিদ্ধান্ত হয়
ভাসলে অস্থির
ছিপ-জলের
অসাময়িক সম্পর্ক
লেখা হয় শিশের ডোবায়
আকাশ নীল হলে
নদীতে ফুল ফোটে
উৎসব সূচনা হয়
পূর্ণ ঘটের জলে. . .
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অকপট
চঞ্চল রায়
আজকাল সব টেবিলে উঠে আসে ---
মিছিল ভালোবাসা স্বপ্ন বন্ধু শত্রু মানুষ দেশ সমাজ বিশ্ব ব্রক্ষান্ড ;
কাগজের মত প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় হিসেবে রাখি কিম্বা ফেলি ;
কেবল তুমি এসে বসলে ..........।
দেখেছি তিনবছর ,দেখিনি ত্রিশ ;
বলেছি ছয় প্লাস এক প্লাস তিন প্লাস তিন মোট তেরটি শব্দ ,শুনেছি তিনটি তবু ......।
তবু অনেক মনে পড়ে তোমাকে , তুমি যে অনেক না পাওয়ার .....।
পঞ্চাশ হয়েছে তোমারো ,হেমন্ত হাওয়া, শীত আসবে ,আর দেখা হবে না ,আমি জন্মান্তরে বিশ্বাস করি না ।
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি বাঁকুড়ার বিয়েত্রিচ,শুন্যে রচিত.....
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মন হারিয়ে যায়
প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়
মনের নাকি কথা ছিল তোমার কাছে যাওয়ার
মনের নাকি ইচ্ছে ছিল তোমার চোখে 
আলতো চুমু খাওয়ার
মন এখন ব্যস্ত ভীষণ
ও তার ঘরের ভিতর ঘর
সে সময় কোথা পায়, শুধু
মনের ভিতর মন হারিয়ে যায়।


আষাঢ় মাসের পয়লা তারিখ বৃষ্টি ঝমাঝম ।।
কালিদাসের সময় থেকে এমনই তো নিয়ম ।।
মনের নাকি ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে স্নান ।।
(ও তার )বুকের ভিতর অঝোর বাদল ।।
সে স্নানের কথা বেবাক ভুলে যায় ।।
মনের ঘরে মন হারিয়ে যায় ।।


আটখানা ঘর আর দরজা নটা ।।
এসব নিয়ে দালান কোঠা ।।
দোতলার বারান্দায় খাঁচা ।।
পাখি আসে কিন্তু থাকতে নাহি চায় ।।
মনের ভিতর মন হারিয়ে যায় ।।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তুমি দুঃখ দিয়েছিলে বলে
মৃত্তিকা মুখার্জী চট্টোপাধ্যায়

তুমি দুঃখ দিয়েছিলে বলে
আজও আমি অহংকারী,খুব
এ বুকের তোরঙ্গ,দেরাজে
কত মেঘ দিয়ে গেছে ডুব-
তবু কেউ বৃষ্টির পায়নি সন্ধান ,
অশ্রু ও চোখে আজও
স্বপ্ন ব্যবধান।
মেঘ জানে এ চোখের আগুন তরল,
শোক জানে এই চোখে
মৃত্যু সরল।।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পাগলী-৩৩
রূপক সামন্ত
পাগলী,
চল আজ হারিয়ে যাই দুজনে। 
হাতে হাত রেখে শিশিরভেজা দূর্বাঘাস মাড়িয়ে সরু আলপথ ধরে হেঁটে চলি। দুপাশে সবুজ গালিচা বিছানো মায়াময় ধানসিঁড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দূর থেকে দূরে। আরও অনাবিল দূরে। সেই যেখানে দামোদরের চরে বাতাস আর কাশফুল কানেকানে এলোমেলো কথা বলে। তিরতির করে বয়ে চলে সরু জলরেখা। তাতে ভেসে চলে রুপোলি সরপুঁটি আর মৌরলা। চল আজ এই মেঘ ভাসানো দিনে সেখানেই যাই। শান্ত এক গাছের নীচে বসি। আমার বাঁহাতে জড়িয়ে রাখবো তোর কোমর। পরম নিশ্চিন্তে নেমে আসবে তোর মাথা আমার কাঁধে। তোর চাঁপাকলি আঙুল জড়িয়ে খুনসুটি করবে আমার অবুঝ মন। জীবনের গন্ধমাখা তোর উড়ো চুল পরশ দিয়ে যাবে আমার কপালে, চোখে, মুখে, বুকে।
একটিও কথা বলবো না দেখিস। শুধু তোকে আদর করে যাবে আমার অভিমানী হৃদয় আর লিখে রাখবে আমাদের সেই আপন মনকথা।
তোকে ভালোবেসে বড়ো সুখ রে পাগলী, বড়ো সুখ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

*****
শিল্পী - প্রাহনা বসু
*****
পুজো-র কথা

আমার পুজো
দোলা সেন
‘দুগ্গা ঠাকুরকে নম কর সোনা’।
‘না নন করি না, ঠাকুর দুততু, পচা , নোননা’!
হাঁ করে তাকিয়ে থাকি, আমার দুবছুরে ভাইঝির দিকে। বাহারী প্যাণ্ডেল, ঝলমলে আলোর সাজ দেখে তো বেশ খুশী ছিল এতক্ষণ – হঠাৎ এই ভাবান্তরের কারণ?
‘দুততুরা মারে। অসুরকে শুধু মানছে, রক্ত বেরিয়ে গেছে, তাও মানছে’ – অকাট্য যুক্তি। দুদিন আগে শেখান নীতিকথার ফল।
মনে পড়ল, বেশ কিছু বছর আগে ওর বাবাও প্যাণ্টের পকেটে লুকিয়ে বোরোলীন নিয়ে যেত অসুরের শুশ্রুষা করবে বলে। যেমনি বাবা, তার তেমনি মেয়েই তো হবে!এই ভাবনার পথ ধরে চলতে চলতেই ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসে চারিদিকের আলোর রোশনাই, মাইকের আওয়াজ। দূর থেকে কানে ভেসে আসে ফেলে আসা দিনের ঢাকের বাদ্যি – শুক্লপক্ষের অষ্টমীর চাঁদের আলোয় মাখা পথটা বড় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওই পথ ধরে এগিয়ে চলি আমি, ফ্রকপরা এক মেয়ে – ভাইয়ের হাত ধরে, মা-বাবার সাথে। গ্রামের স্কুলের মাঠে প্যাণ্ডেল, হ্যাজাকের আলোয় চকচকে ঘামতেল মাখা মায়ের মুখ। ধুনোর ধোঁয়া, ঢাকীর নাচ – আরতিনৃত্য শুরু হয়ে গেছে। আগের বছরও ডাউহিলে আরতি নাচে অংশ নিয়েছি। কাপটা এখনো ঘরে রাখা আছে। কিন্তু যতই পা দুলুক তালে তালে, শরীর মাতিয়ে দিক ধুনোর গন্ধ - মা বলে দিয়েছে South Bengal এ মেয়েরা বারোয়ারী পুজোয় ধুনুচি নাচে না। মেয়ে-জন্মের জন্য এই প্রথম কষ্টের অনুভূতি ছড়িয়ে গেল মনের আকাশ জুড়ে। অথচ মাথার উপর শরতের তারাভরা আকাশ, ঠাকুরদালানের আলোর সীমানা পেরোলেই নরম চাঁদের আলো শাল, আকাশমণির গা চুঁইয়ে পড়ছে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাচতে নাচতে চলেছে ঠাকুর দেখতে। কই, আমার দু:খের ছিটেফোঁটাও তো কোথাও নেই! এভাবেই হাসি-কান্নায়-আনন্দে –দু:খে জড়িয়ে গেল আমার অষ্টমীর সন্ধ্যে।
গ্রামের রাত, আটটা-নটা বাজলেই নিশুতি। কোয়ার্টারে ফিরছি ইউক্যালিপটাসে ঘেরা বনপথ ধরে। তার দুধসাদা গুড়ি এই আবছা আলোতে প্রায় অলৌকিক দেখাচ্ছে।
দিনের বেলাটা কিন্তু অন্যরকম। সক্কালবেলা জলখাবার খেয়ে ভাইবোন বাবার বাইকে সওয়ার। যেখানেই প্যাণ্ডেল, সেখানেই থামা। দৌড়ে ঠাকুর দেখে আসা, আর গোনা ক’ নম্বর হল। কোথাও কোথাও প্রসাদও দেয় আবার। দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ ঝাড়গ্রাম। হোটেলে ইচ্ছেমতো খাওয়ার আনন্দ। আবার রাতের জন্য অর্ডার দিয়ে রাখা – মার সাথে খেতে হবে তো! ঠাকুর দেখতে দেখতে সন্ধ্যে গড়ায়। আঁধার নির্জন ফিরতি পথের বুক চিরে দেয় বুলেটের তীব্র আলো। দুপাশের এত চেনা ছবি সাদাকালোয় কেমন যেন অচেনা। মার জন্য মন কেমন করছে এবার, কিন্তু বাইকে তো আর চারজনে......
দশমীতে মায়েদের সিঁদুর খেলা, আর আমাদের সিংহ অসুরদের মুখে মিষ্টি গুঁজে দিয়ে বলা ‘আবার এসো’। ঠাকুরদের মুখ অবধি হাত পৌঁছায় না যে! বিসর্জনের পরে বাড়ীতে লোকজনে ভরা সন্ধ্যে। টেবিল ভরা বাড়ীর তৈরী নাড়ু, মোয়া, গজা, নিমকি, ঘুগনি। আমার হেংলু ভাইটা মাকে বারে বারে প্রণাম করছে আর নাড়ু আদায় করে আনছে। এইভাবেই এক পুজো কেটে যায়, সামনের বছরের পথ চেয়ে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমাদের বাড়ির পুজো
চন্দ্রিমা চট্টোপাধ্যায়
আমাদের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের কাছে ওন্দা নামক জায়গায়।আমাদের বাড়িতে দূর্গাপুজো হ য়।এই পুজো প্রায় দেড়শ বছ র আগেকার। বলা যেতে পারে প্রায় ছয় পুরুষ ধরে আমাদের পুজো হয়ে চলেছে।কৃষ্ণচন্দ্র চ্যাটার্জী পেশায় ছিলেন বাঁকুড়া কোর্টের উকিল। তার স্ত্রী প্রথম স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন মা দূর্গার কাছ থেকে।তিনিই প্রথম মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন।সেই থেকে আজ অব্ধি অত্যন্ত ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে আমাদের পুজো হ য়ে চলেছে।
এগারো টি পরিবার নিয়ে আমাদের এএই চ্যাটার্জী গোষ্ঠী। প্রত্যেক ষষ্ঠ ব ছরে আমাদের পালা পড়ে।এই বছ র আমাদের পুজোর পালা।পুজোর তিন চারদিন আগের থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
ষষ্ঠীর দিন সন্ধেবেলায় বেল্বিবরণ হ য়।দূর্গা মন্দিরের পাশে বিশাল বড় বেল গাছের তলায় ঘট পেতে মায়ের পুজোর আয়োজন ক রা হ য়।পুরোহিত মশাই ম ন্ত্র পড়ে মাকে আহ্বান জানান।মা তখন মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপে আবির্ভূতা হ ন।
সপ্তমীর দিন সকালে পাল্কী নিয়ে মাকে ব রণ ক রার জন্য সবাই বড় পুকুরে যায়।আমরা মঙ্গল ঘট নিয়ে অপেক্ষা ক রি তাদের ফিরে আসা প র্যন্ত।পাল্কী নিয়ে ফিরে এলে পাল্কী বাহকদের জল দিয়ে পা ধুয়ে দেওয়া হ য়।তারপর আমরা এগারো জন এয়োস্ত্রী মিলে ন'বার ঘুরে ক লা ব উ আর মাকে ব রণ ক রে ম ন্দিরে স্থাপন ক রি।শঙ্খ ধ্বণি ও উলুধ্বনি দিয়ে ল ক্ষী পাতা হ য়। আমাদের তিন দিন মাকে অন্ন ভোগ দেওয়া হ য়।স প্তমী পুজো শেষ হ লে আমাদের খাওয়া দাওয়া হ য়।ওই দিন যিনি বারিদার তিনি স ক ল কে খাওয়ান। প্রায় তিনশ লোক আম ন্ত্রিত থাকেন।স ন্ধেবেলা আরতি হ য়।
প রের দিন অষ্টমী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হ য়।ওই দিন স কালে পুষ্পাঞ্জলি হবার প র দুপুরবেলা অন্নভোগ দেওয়া হ য়।তারপর স ন্ধিপুজোর প্রস্তুতি। ১০৮ টি পদ্মফুল দিয়ে মাকে প্রস ন্ন ক রে তারপর ব লিদানের প্রস্তুতি। মা মা ধ্বনিতে চারিদিক মুখ রিত হ য়ে ওঠে।মায়ের হাত থেকে যখন আশীর্বাদী ফুল পড়ে আমরা স ক লে উচ্ছসিত হ য়ে উঠি। তারপর চাল কুমড়ো শসা আর আখ ব লি হ য়।তারপর আরতি হ য়।
প রের দিন নবমী পুজোর প্রস্তুতি। ওই দিন অন্ন ভোগের প র ৫১টি পদ্মফুল দিয়ে মায়ের পুজো হবার প র আবার ব লিদান হ য়।ব লিদানের প র ম ন্দির প্রাঙ্গণ প রিষ্কার ক রে হোম শুরু হ য়।হোম স ম্পন্ন হ লে আমরা স ক লে হোমের টিকা ক পালে প রি। স ন্ধেবেলা আরতি হ য়।
তিন দিন আন ন্দ ক রার প র চতুর্থ দিনে ম ন টা খুব খারাপ হ য়ে যায়।স্নান ক রে বেল পাতায় শ্রী শ্রী দূর্গায় ন ম লিখে অঞ্জলি দিয়ে দ ই চিড়ে লাড্ডু দিয়ে মাকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হ য়।অপ রাজিতা পুজো শেষ হ লে শান্তি জল নিয়ে সিঁদুর খেলা শুরু হ য়।অবশেষে মা দূর্গার বিস র্জন।স ক লের চোখ জলে ভ রে ওঠে। সেই বেদনাকে পাথেয় ক রে আমরা আগামী ব ছ রের প্রতীক্ষায় থাকি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পরবাসে দুগ্গাপূজো
সমীর কুমার পাত্র
সালটা বাংলা ১৪০৪ । রণতোষ আছে বিলবাও শহরে । পূজোর গন্ধ সেখানে নেই । তবে, জীবনের প্রথম ৩০ টা বসন্ত বাংলায় পার করে যাওয়া যে কোন ব্যাক্তি, বাঙালী হলে তো কথাই নেই, সেপ্টেম্বরে পূজোর কথা না ভেবে, পূজোর গন্ধ না শুঁকে থাকবে কি করে ? সকালে মা'কে একটা চিঠি লিখেছে, তখনি মনে পড়ে পূজোর কেনাকাটা হয়েছে কি না ! এক লাইন পূজোর ব্যাপারেও লিখেছে মা'কে লেখা চিঠিতে । জীবনে প্রথম দূর্গাপূজোয় বাড়ী নয় শুধু, দেশেরও বাইরে ! মা তো হা হূতাশ করছেই দেশে । রণ লিখেছে তার নিজের খবর ও কাজ নিয়ে, আর অনেক বেশী লিখেছে ক্ল্যারিসা'র কথা ! ----
Clarissa Lopez, Argentina র মেয়ে Food technology তে গবেষণা করছে । মাঝে মাঝে রণতোষ দের Biochemistry & Molecular biology laboratory তে আসে Spectroscopy যন্ত্র ব্যাবহার করতে । টুকটাক কথা হয় । একদিন ল্যাবরেটোরীতে কাজ চলছে তার বাকীরা সকলে বেরিয়ে গ্যাছে । হঠাত্ Clarissa এসে পাশে বসে প্রথম কথা, স্পাংলিসে; Rono, can tell me por favour what prepare you gloomy this evening? আচ্ছা পৃথিবীর সব মেয়েরা কি একই রকম, এক ঝলকেই বুঝে যায় ! মনে মনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে । মুখে বলে, no no just I was thinking about my home. রণ সত্যি সত্যি ভাবছিল মল্লিকার কথা, IICB কোলকাতায় PhD করছে । কি ভাবে শেষ মুহূর্তে মল্লিকার সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে গিয়েছিল ! Clarissa বলে, I know, তুমি ভাবছ তোমার বউ রান্না করে রাখতো যদি তা হলে-- রণ ওর চোখে তাকায়, ---Clarissa বলে sorry. এরপর ওরা বাস ধরে যায় Las arenas metro station থেকে Abando তে Clarissa র apartment এ । Clarissa তৈরি করে Tortilla de patata গল্প চলে । কথা বেশি বলেব Clarissa ই, ভারতের কথা শুনতে চায়, আর বলে রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিত রায় দের কথা বল । রণ তার Las arenas এর বাসায় ফেরে ভোরের বেলা । দিন চলছিল কাজ করে, ওদেশের মানুষ দের সাথে মিশে আর বন্ধুবত্সল জাতটার সহচর্য্যে ।
2nd October 1997 মহালয়া আসছে ।
২৮ শে সেপ্টেম্বর 1997 সকাল সকাল উঠে তৈরি হচ্ছে রণতোষ । আজকের জার্নাল ক্লাবের প্রধান বক্তা সে । অধ্যাপক ফেলিক্স গোনী'র মেম্ব্রেনাস্, আবাহো -আরিবা অাজ নয়, ও বলবে কিভাবে কোষপর্দার মধ্যে প্রোটিনগুলো জল পরিবহনের নল তৈরি করে । How the protein aquaporins makes channels for water transport across the cell membranes.
জার্নাল ক্লাব শুরু হয় কাঁটায় কাঁটায় সোয়া আট টায় ।
২৫ জন বিজ্ঞানীর এই দলে রণতোষ ভারত থেকে যোগদান করেছে ২৪ জুন 1997. সেদিন থেকে দলের সব সদস্যদের স্পাংলিশে বক্ বক্ লেকচার শুনে শুনে কান পচে গ্যাছে ! তৈরি হয়েই ছিল, আলোচনা শুরুর দিকে নড়বড়ে হলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে গুছিয়ে তথ্য পরিবেশন, নিজেদের দলের পরিকল্পনা ঠিক কি ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলা, পরিবর্তন গুলো কেন প্রয়োজনীয় তাও যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া । অধ্যাপক গোনী বিহ্বল হয়ে শুনেছেন এবং মিটিং সোয়াদশটার বদলে শেষ হয়েছে সোয়া এগারোটাতে । সেদিনের মিটিং এ ওনার শেষ মন্তব্য ছিল: - we should have asked Ranatosh to speak earlier.
Professor Felix Goni'র ভালোরকমের catch up ছিল ও আছে । তাই তো AIDS prevention & cure সংক্রান্ত WHO sponsor project টা মিলেছিল 1996 সালের November এ । রণ'র আসতে কিছু দেরী হয়েছিল, Visa ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক প্রস্তুতিতে ।
মিটিং শেষে, বন্ধু আসিয়ের গালান (Asier Galan), Ion, Ana, দের'কে নিয়ে কাফেটেরিয়াতে যচ্ছিল সে, বিশাল দোতালায় চাতাল টা পেরোতে পেরোতে কি যেন ভাবছিল, পাশেই বিলবাও এয়ারপোর্ট, হঠাত্ একটা এরোপ্লেন বেরিয়ে গ্যালে বিশাল শব্দের অনুরণন হল আর রণ'র বুকটা কেঁপে উঠল ! কিছু বোঝার আগেই রণ'র চোখ দিয়ে শুধু জল গড়াচ্ছে নাগাড়ে, আর অব্যক্ত স্বর বেরিয়েও বেরোচ্ছে না - "বাবা আমি পেরেছি! আমি পেরেছি বাবা !" Asier বলে চলেছে, কে পাশা রণ? তার তো ভ্রূক্ষেপ নেই ! সে চলে গ্যাছে কুড়ি বত্সরেরও বেশি পিছনে, যখন ওর বাবা প্রায়ই বলত যদি ভালো করে পড়াশুনা করে এরোপ্লেনে চড়, বিদেশে যেতে পার, গবেষণা করতে আমেরিকা বা ইউরোপ যাও, আমি দূরবিন দিয়ে দেখব । মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বভাব দলনায়ক রণতোষ বরাবরই অদম্য প্রকৃতির । স্কুল জীবনের স্মৃতি, বাবার সব কথা, বাবার কাছে শোনা দেশের সেই সব বীর সংগ্রামীদের, রামায়ণ-মহাভরতের কথা সব মনে পড়ছে । মনে পড়ছে বাবার চলে যাওয়া, কয়েকদিন পরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা ! সব আজ ইতিহাস ! সেদিন গুলোতে তার চোখে জল আসে নি আজ দুকুল ছাপিয়ে গড়িয়ে চলেছে আটলাণ্টিকের ঢেউ মিলেমিশে যাচ্ছে তারই লবন জলে ----- চরাচর ভেদ করে শব্দ কটি - বার্তা ছড়ায় - "বাবা আমি পেরেছি" ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমার বিজয়া
রূপা ঠাকুর
মাগো চলে যাচ্ছো মা কি এক অভিমান হতো মার মুখের দিকে তাকিয়ে। সবাই যে বলে বিসর্জনের সময় মা দূর্গাও কাঁদেন সত্যিই তো তাই।ঐ তো মায়ের চোখ জলে ছলছল।এদিকে ঠাকুরমশাই বলেই চলেছেন "গচ্ছ গচ্ছ পরম স্থানে"।কাঁদছেন.... রাজ্য শুন্য, গৃহ শুন্য...
হাহাকার মন জুড়ে। কখন যে আবার বলবেন, "পুনরাগমনায় চ"।চুপচাপ চোখের জ ল মুছে ফেললাম। ছেলেরা কিন্তু দিব্যি আছে। ওদের খালি বাজি আর পটকার হিসেব।কালি পটকার ঝাল আর কে হাতে ক রে চকলেট বোম ফাটাবে তার ফিরিস্তি।
মা এইদিন নতুন জামা পরতে দিতেন না। মা চলে যাচ্ছেন তাই নতুন জামা পরতে নেই। আসলে টেনেটুনে তিনটে জামাই হতো। দশমী তে আর পরার জামা কই?
মা চলে গেলে মন্ডপ টা ফাঁকা ফাঁকা লাগ ত। বাড়ি ফিরে দেখ তাম মা নাকের জলে। মাংস বানানোর তোড়জোড়। ত খন কার দিনে মাংস ব ল তে চিকেন ছিল না। খাসির মাংস।সাথে দ ই বড়া, ঘুগনী। এখন কার ম তো সাউথ ইন্ডিয়ান বড় বড় দ ই বড়া ন য়। ছোট ছোট দ ই বড়ি দারুন টক ঝাল মিশ্রনে ফেলা।এসব দেখেশুনে ম ন খারাপ একটু ফিকে। স ন্ধ্যেবেলা বাড়ি বাড়ি বিজ য়া ক র তে যাওয়া।
স ন্ধ্যে হ তে না হ তেই বাঊরী পাড়া থেকে দ লে দ লে ছেলেমেয়ে ব উ বিজ য়া ক র তে আসে।"বিজ য় বিজ য় দ ন্ডবৎ গো"।গুড় পিঠে, বোঁদের লাড়ু আর মুড়ির পাওনাটুকু পেলেই মুখে তৃপ্তির হাসি।কোলের ছমাসের ছেলেটিকে দেখিয়ে ব লে" উয়ারটাও দাও গো"।
এখন বিজ য়া দ শ মীতে মায়ের বিস র্জনের আগেই "হ্যাপি বিজ য়া দ শ মী"।এখন সব ই হ্যাপি। কিন্তু স ন্ধ্যেবেলার সেই জ ন স্রোত ক বে কোথায় হারিয়ে গেছে।মা এখন একাই থাকেন। কেউ আস তে পারে ভেবে আনা মিষ্টি ফ্রিজেই পড়ে থাকে। এখন যে যার ঘ রে যে যার ম ত হ্যাপি।

*****
শিল্পী - প্রাহনা বসু
*****
রম্য রচনা
ভোম্বল বাবুর সুখ-টান
সংঘমিত্র মাকূড়
"বেশ ছিলাম বাপু দেড় কামরার ছোট্ট ভাড়া ঘরে "ভোম্বল বাবু বেশ আয়েশ করে সোফায় বসে ভাবেন l ভাবনা টা আরো জাঁকিয়ে উঠতেই লুঙ্গি টেনে পা দুটো সোফায় তুলতে যাবেন --এমন সময় কোমরে খোঁচা !তাকিয়ে দেখেন ফ্লোর এ বসে ছেলে গেম খেলছিলো ,তাকিয়ে আছে তার দিকে,অর্থ পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় -" আবার পা তুলে সোফায় বসছো , মায়ের ঝাড় পড়বে কিন্তু !" প্রতিবর্ত ক্রিয়া তে জিভে জল আসার মতই চরন যুগল কেঁউ কেঁউ করে ফ্লোর শায়ী হয় তখনই l ছোট আর সাবেকি ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নিজের নতুন বাড়ি তে উঠে আসা ইস্তক এই ঝামেলায় অহরহ জড়িয়ে পড়ছেন ভোম্বল l
গৃহপ্রবেশ চুকেছে l সদলবলে গিন্নী ঝাঁ চকচকে ফার্ণিসড্ বাড়ি তে ঢুকে পড়েছেন, তাকেও বগলদাবা করে আনতে হয় এনেছেন l
তারপরের দৃশ্য ?
"চিমটি ! দ্যাখ তোর বাবার কাণ্ড !কেমন জল ছপছপ করে বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে !দিলো !দিলো !নতুন ডোর ম্যাট টার বারো টা বাজিয়ে ! "
"বলি তোমার বয়স টাকি বাড়ছে নাকি কমছে ?কি আক্কেলে ভিজে গামছা টা মালা বদলের মতো চেয়ার এর পিছনে ঝুলিয়ে রাখলে ?"
"টুশকি !দেশলাই এর কাঠি বেসিনে ফেলেছে কে ?"
বেশ ছিলো আগের ভাড়া বাড়ি র সাকুল্যে দেড় খানা ঘর l মা মেয়ে ব্যাটার ঢালাও বিছানার পাশেই ডাইনিং টেবিল ,নাকের ডগায় টিভি l অন্য ঘরে ভোম্বল বাবুর ঠাঁই ,পাড়া র বৌদি রা বা টুশকি র গানের স্যার এলে পত্রপাঠ ওঘর থেকে এ ঘরে বিদায় !আর ঘরের মধ্যে দাড়ি তে ঝোলানো মেয়ের ওড়না ,ছেলের জাঙ্গী প্যান্ট ,সি থ্রু গামছা ,আলনায় স্তূপীকৃত কাপড়ের ওপর লাট খাচ্ছে বৌ এর ছেড়ে রাখা উল্টানো সালোয়ার ! হলে কি হবে ,ঝুল আর ছুঁচোর নোংরা সমেত ঘর গুলো বড্ড যে ভাল লাগতো ভোম্বল বাবুর ,এই আটপৌরে এলোমেলো থাকা ,ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংসার l
নেভা বিড়ির মত একদিন দুদিন তিনদিন ঝাঁ চকচকে বাড়ি তে কেটে গেলো l ভোম্বল এর মনে না আছে সুখ না আছে স্বস্তি !পরি -তার বৌ শালী আর তার মেয়ে কে নিয়ে গুচ্ছ টাকা খরচ করে বাড়ি সাজিয়েছে l ম্যাচিং টাওয়াল ,দারুণ দারুণ শো পীস ,মেঝের কনট্রাস্টে ডোর ম্যট্রেস ,সোফা সেট ,কিচেন এর সব ডাব্বা !
মানিয়ে নেবার শেষ চেষ্টা করে ভোম্বল বাবু স্থবির হয়ে যান l নতুন বাড়ির এত ফ্যাসাদ !এত ডুস অ্যান্ড ডোন্টস !আগে জানলে এই পরিপাটি সংসার টি তে কে ঢুকতো বাপু !কিন্তু মন খারাপ হলেই কলেজ জীবন থেকেই যে বস্তু টিকে টেনে সুখ পেয়েছেন ,সেই বিড়ির বান্ডিল টি ও তো এ বাড়ি তে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে ,বাথ রুমের কোটোরে বিড়ির সিন্ নেই !কোটোরই নেই যে ,সব দশ আট এর টাইলস্ এ মোড়া ! তুমি ড্রিংক করো মাঝে মাঝে সেও ভি আচ্ছা --পারির নিদান l
পরি কে আদর করে ডাকতেন পরিরানী ! পরি রানী কি আর সে পরি আছে !বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ,ডানা থাকলে ফরফর করে উড়তো l নতুন নতুন ভাব চোখে মুখে l বেশ রাত্রে শুতে এসে নতুন ঘরের গন্ধের সাথে নানা রকম ক্রিম ট্রিম এর গন্ধ মিশিয়ে পরি ঘনিষ্ঠ হয়ে জিগ্গেস করে- " কেমন লাগছে গো? " ভোম্বল যেন ভোম মেরে যান " নতুন ঘর বড্ড নতুন গো --" পরি আরো একটু কাছিয়ে আসে " আর আমি ? " " তুমিও তো নতুন নতুন হয়ে গেছো পরিরানী! " পরি যেন আরো দুঃসাহসী হয়ে ওঠে ,আদুরে গলায় কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে -" শোন একটা কথা রাখবে আমার ? " ঘড়ঘড় শব্দ হয় -" কি ? " নির্ঘাত বিড়ি বা লুঙ্গি নিয়ে কিছু একটা বলবে !
" নতুন ঘরে আর আমায় পরীরানী বলোনা ,বড্ড সেকেলে শোনায় " ভোম্বল এর গলা জড়িয়ে না থাকলে পড়েই যেতেন ঠিক মাকরানা মার্বেলের মেঝে তে ! সুখ-টানের খুব প্রয়োজন হয় l
এরও পরের দৃশ্য হয় ?চিলে কোঠার ঘর টা নতুন বলে আরশোলা ছারপোকা নেই ,যথেষ্ট পুরনো জামাকাপড় ,ভাঙা বাক্স ,পুরনো পত্রিকার ঢের ,ভারী তক্তা পোষ আর আছেন ভোম্বল বাবু l তক্তা পোষে জুত করে বসে পরম নিশ্চিন্তে বিড়িতে সুখ -টান মারছেন l
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বাঙ্গালিয়ানা
সুব্রত চৌধুরী
পুজো মানে কলকাত্তাই বাঙালীর ভ্রমনের পরিকল্পনা। কলকাতার বাইরে, পাহাড়ে কি সমুদ্রে না গেলে ওনাদের জীবন বৃথা, পুজোটাই নষ্ট, নাকি নষ্ট জীবন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুজো সংখ্যার লেখায় ফেলুদাকেও কলকাতার বাইরে ঘোরাতেন সত্যজিৎবাবু। না, না, ওনারে মানিকদা বলার মতো পর্যায়ে পৌঁছই নি। কিন্তু আমার সমস্যা হোলো শখ করে বেড়াতে য়াওয়ার মতো ইচ্ছা বা সামর্থ্য কোনটাই না থাকায় ভ্রমণ জিনিষটা আমার জীবনে খুবই কম। একবার পুজোর সময় আপিস আমায় পাঠালো সুইতজারল্যান্ড। আমার বৃদ্ধ দক্ষিনী বস পরামর্শ দিলেন আর্মস্টারডাম হয়ে যেতে। তার সাথে উপদেশ: you should visit the red light area in the evening.
KLM এর উডোজাহাজে সক্কালবেলায় নামলাম সিফোল এয়ারপোর্টে, আমার দেখা সব চেয়ে সুন্দর এয়ারপোর্ট। এক সময় দেখি, এক ক্যানাল পেরোচ্ছি ব্রিজের উপর দিয়ে, খানিক পরে এক জনবসতির উপর ফ্লাই ওভারে চড়লো প্লেন। এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে ট্রেনে চড়লুম, গন্তব্য কয়েক স্টেশন পরের আমস্টারডাম শহর। শনি রবিবার সকালের ট্রেনে দু একটা খোঁয়ারীভাঙা লোক ছাডা কারোকে পাওয়া যায় না। আমার কপাল ভালো দু তিনটে কোচ খুঁজে একজনকে পেলাম, সে এক ডানা কাটা পরী, তারও একই গন্তব্য। কপাল যে আরো ভালো খানিক পরে বুঝলাম, - তিনি ইংরিজি ভালোই বলেন। সস্তার হোটেল এর খোঁজ তিনি আমায় দিলেন। এটাও জানলাম হোটেলের দাম নিয়ে দরাদরিও করা যায় ও দেশে। সুন্দরীর মা ডাচ বাবা ইন্দোনেশিয়ান। তার পেশা কি জিগগেস করতে স্মার্ট উত্তর : I **** for money. চার অক্ষরের ইংরিজি শব্দটা আর উল্লেখ করলাম না!
হোটেলে পৌঁছে একটা বিছানা পেলাম ডর্মে, পঁচিশ গিল্ডারের বিনিময়ে। গিল্ডার আজ বেঁচে নেই, ইউরো তাকে মেরে সেই জায়গা নিয়েছে। ঘরে আরো 7/8 জন ভ্রমণকারী ছিল, যারা দিনের পর দিন সাইকেলে চডে আমস্টারডাম বা তার চারপাশ ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। এক পিতা পুত্রের জুড়িও ছিলো। খানিক পরে বেড়িয়ে পডলাম শহর দর্শনে।
৩৫ গিল্ডার এর টিকেট কেটে লঞ্চে কন্ডাকট্ড ট্যুর এ আমস্টারডাম শহরের ৭০০ ক্যানালের উপর ঘুরলাম। ১৮ বছরের পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে ভুলভাল কিছু বর্ণনা দেওয়ার ঝুকিটা না হয় নাই নিলাম। তবে ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অফিস দেখে মনে হয়েছিলো এই কোম্পানীটার অপমৃত্যু হয়েছিলো আমাদের দেশের মাটিতে। জলভ্রমন শেষ হলে দুপুরের খাওয়া সারলাম আলুভাজা আর সফটি দিয়ে।
এরপর পায়ে হেঁটে শহরের এদিক ওদিক দেখলাম, শহরের ৩৪ টা মিউজিয়ামের দু একটায় ঢুকেছিলাম। সন্ধের মুখে আলাপ হোলো ভারতীয় বংশদ্ভূত এক ডাচ নাগরিকের সাথে। ওর পুর্বপুরুষেরা সুরিনাম গিয়েছিল শ্রমিক হিসেবে, সেখান থেকে নেদারল্যান্ড। এরকম নাকি অনেকই আছে। সে আমায় রেড লাইট এলাকার পথ বলে দিল।
সন্ধ্যের পর রেড লাইট এলাকা আমস্টারডামের ট্যুরিস্ট আকর্ষক জায়গা, থিকথিক করে লোক। প্রত্যেক গনিকাগৃহের সামনে লাল আলো লাগানো, মানুষ সমান বড়ো জানলায় প্রায় নগ্ন নারী দেহের প্রদর্শনী। অনেকে দেখলাম সপরিবারে, ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুরছে। হঠাত চোখ গেল এক বৃদ্ধ দম্পতির দিকে, মহিলা শাডী শাঁখা সিন্দুর পরিহিতা। আমি এগিয়ে গিয়ে জিগগেস করলাম, আপনারা কি এই দেশেই থাকেন, না আমার মত বেড়াতে এসেছিলেন? দুজনে ছিটকে সরে গেলেন, পারলে মুখ আড়াল করে পালিয়ে যান। বাঙালী ভদ্রলোকের হিপোক্র্যাসী ওদেশেও পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছিল।

*****
ভ্রমণ কাহিনী
লালী গুরাসের দেশে
তুলিকা ধর
এবার চললাম হিলে বার্সে, পশ্চিম সিকিম । রডোডেনড্রনের টানে। এপ্রিলের এই সময়টাতেই খুব অল্প সময়ের জন্যে নাকি দেখা পাওয়া যায় এই সুন্দরীর , তাও ভাগ্য ভালো থাকলে। অতএব পিঠে রুকস্যাক নিয়ে ভিড়ে পড়লাম এক বন্ধুগ্রুপে। রাতের দার্জিলিং মেল ।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে অপেক্ষা করবে আমাদের গাড়ী , গন্তব্য ওখরে । স্টেশনে নামতেই ড্রাইভারের ফোন এলো - দিল খুশ, মন উচাটন , সব হৈ হৈ করে গাড়ীতে উঠে পড়লাম। সকলের এনার্জি ট্যাঙ্ক ফুল, টুকটাক খাওয়া সমস্বরে গান শুরু হয়ে গেল। 
তিস্তাবাজার ছাড়ানোর পর একটা ফোন এলো স্বপ্নাদির মোবাইলে ।
---আপলোগ কিধার ? ম্যায় কাল রাত সে আপকে লিয়ে স্টেশন মে হু ।----------------সর্বনাশ ! আমরা তাহলে কার গাড়িতে উঠেছি ?
এবার সবার মাথা ঘেঁটে ঘ । গ্রুপলিডারকে চেপে ধরে যে কাহিনী পাওয়া গেলো তার মর্মার্থ এই যে সে ওখরে-তে দুটো হোমস্টে-তে কথা বলেছে, তবে কনফার্ম করেছে একটিতেই । কিন্তু তার দুর্দান্ত হিন্দীর দৌলতে দুজনেই ভেবেছে আমরা তাদের অতিথি হতে চলেছি আর তাই দুজনেই আমাদের জন্যে গাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে। কি আর করা ? অগত্যা দ্বিতীয় গাড়ীর ভাড়া গচ্ছা দিয়ে আর করযোড়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে দ্বিতীয় হোমস্টে-র থাকার খরচটা মকুব করা গেল।



ওখরেতে রাতটুকু কাটিয়ে পরের দিন সকাল আটটায় হাজির হলাম ৯-১০ কিমি দূরে হিলে-তে। সেখান থেকে সাড়ে পাঁচ কিমি ট্রেক করে পৌঁছাতে হবে বার্সে আবার সন্ধ্যের মধ্যে ফেরা । বার্সে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির ফটকে অনেক লাঠি পড়ে আছে । আমাদের আগের ট্রেকাররা ফেলে গেছে । সেখান থেকেই নিজের নিজের লাঠি বেছে শুরু হলো জঙ্গলের মধ্যে শুড়িপথ দিয়ে হাঁটা । নানা পাখির কিচিরমিচির , বিশাল বিশাল চিরহরিৎ বৃক্ষ শতাব্দীপ্রাচীন শ্যাওলা বুকে দাঁড়িয়ে । নিস্তব্ধ বনপথে মাঝে মাঝে সাইনবোর্ড – এখানে রেড পান্ডা , লেপার্ড ,ভালুকের বাস – দল বেঁধে চললাম নিঃশব্দে । সাড়ে পাঁচ কিমি পাহাড়ী পথে ওঠা খুব সহজ নয় । হিলে থেকে বার্সের উচ্চতা ১০০০ ফুট । মাঝে মাঝে জিরিয়ে নেওয়া আবার পথ চলা । ঘন্টা তিনেক হাঁটছি , প্রায় দুই তৃতীয়াংশ পথ উঠে এলাম , একটা ফুলও চোখে পড়েনি । দলের কেউ কেউ পিছিয়ে পড়ছে ক্রমশ । তাদের জন্যে সময়ের থেকে বাড়তি বিরতি নিতে হচ্ছে । চারিদিকে গাছ যেন আরও দীর্ঘ হচ্ছে , অন্ধকার চারিদিক, সূর্যের আলোও ভালোমত প্রবেশের পথ পাচ্ছে না , কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ । কত সহস্র বছর ধরে এভাবেই সব খাড়া , শুধু পায়ের তলায় শুকনো পাতা মাড়িয়ে চলার খসখস শব্দ । কিছু পরে একটা বাঁক নিতেই চোখে হঠাত আলো আসতে শুরু করল , আকাশ দেখা যাচ্ছে । হুররে ! আমরা প্রায় পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে গেছি । আর একটা বাঁক নিয়েই সবাই স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে পড়লাম ।





এ কি দেখছি ! লালী গুরাস ! পাহাড়ের মাথায় প্রায় সমতল একটা জায়গা । সেখানে অন্তত কয়েকশ রডোডেনড্রন গাছ , লাল গোলাপী সাদা ফুলে ছেয়ে আছে । এতো ফুল যে পাতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না । সিকিমিজ ভাষায় এ ফুলের নাম গুরাস । আমরা আনন্দে গাছের তলায় শুয়ে পড়লাম । সবাই পাগলের মতো ছবি তুলছে , কলকল করে কথা বলছে , হাসছে , একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে । সব পরিশ্রম সার্থক । ফুল দেখতেই আসা , কিন্তু একটা গাছে যে এতো ফুল হতে পারে এ তো কল্পনার বাইরে । যে বিভ্রাট দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল , তার শেষটুকু ফুলেল করার জন্যে বনদেবী যে এমন উপুড়হস্ত হবে কে জানতো ?

সব ভালো তার , শেষ ভালো যার , প্রবাদটা আরো একবার মনে পড়লো ।
পুনশ্চ ঃআমাদের পরের সপ্তাহে কোলকাতা থেকে আর একটা গ্রুপ হিলে-বার্সে ট্রেকিং-এ এসে একটাও ফুল দেখতে পায়নি । সব ঝরে গেছে ।

*****
রহস্য গল্প
কুমায়ুনের কুহেলিকা
রোয়েনা ধর

মুক্তেশ্বরের অশরীরী ইচ্ছেটা অনেকদিন ধরেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিল সায়নি;অফিসের দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে কুমায়ুঁ হিমালয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাটা মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছিল সে, সম্ভাব্য দিনটাই শুধু স্থির করতে পারছিল না। চাকরীটা সায়নিকে যে খুব একটা আনন্দ দেয় তা নয় তবে সবাই তো আর মনের মতো কাজ পায় না, এই ভেবে আত্মগত সায়নি কিছুটা স্বস্তি পায়। 

এই সব সাত পাঁচ ভাবনার মধ্যে অফিসের টিফিন আওয়ার এ হটাৎ ফোনটা বেজে ওঠে; চমকে দেখে স্বাগতার ফোন। মনে পড়ে যায় স্বাগতাকে। প্রায় একযুগ পর স্বাগতা কোথা থেকে জোগাড় করল তার ফোন নম্বর? প্রথমতো চিনতেই পারছিল না। স্বাগতা নিজে থেকেই ধরাদিল। ছোট বেলায় ওরা এক সাথেই পড়ত। স্বাগতার বাবা এ জি বেঙ্গল এ চাকরী করতেন। সায়নির বাবার অফিসে একাউন্টেন্টের চাকরী নিয়ে এসেছিলেন। সেই তিন বছর একসাথে থাকা স্বাগতার সাথে, হরিহর আত্মা যাকে বলে। চিন্তায় চ্ছেদ পড়ল স্বাগতার কথায়। এখন ও বহরমপুরে একটা মেয়েদের স্কুলে কেমিষ্ট্রি পড়ায়। কথাবাত্তা বলে মনে হল কুমায়ুঁ হিমালয় যাবার সুপ্ত ইচ্ছেটা বোধহয় এ বার সত্যিসত্যি রূপ নেবে। কথাটা স্বাগতার কাছে পেড়েই ফেলল সায়নী। কিরে যাবি নাকি। ব্যাস আর পায় কে। ঠিক করল পূজার পর একাদশীর দিন বেরিয়ে পডবে। দেখতে দেখতে এসে গেল বহু প্রতি ক্ষীত সেইদিন।অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় ঠান্ডা পড়বে এবার। গন্তব্য পাহাড়, তাই যতটা কম করে নেওয়া যায় ততটাই গরম কাপড় গুছিয়ে নিয়েছিল ও, না হলে ব্যাগ পত্তরের ভারটা ওদের ওপরেই চাপবে। মুক্তেশ্বর পৌঁছতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেল।চারদিকে বেশ নিস্তব্ধ, রাস্তায় অল্প অল্প বৄষ্টি শুরু হয়ে ছিল।অক্টোবরের শেষ, এই সময় সাগরে নিন্মচাপ লেগেই থাকে। শেষ বিকেলের আলোয় মুকুট পরা নন্দাদেবীর ত্রিশূল এক ঝলকের জন্য ওদের চোখে ধরা দিয়ে ছিল,অপূব সে দৃশ্য। হোটেলের ঘরে নিজেদের জিম্মা করে ওরা যখন রাতের খাবার খেতে গেল,তখনই বৃষ্টিটা যেন আকাশ ভেঙ্গে নামতে শুরু করল। দূরে তারই মধ্যে পাহাড়ের গায় বিন্দু বিন্দু আলো যেন আদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ তৈরী করেছিল। অতিথি বলতে একতলায় দুজন স্বামী স্ত্রী দিল্লী থেকে এসেছিলো আর ওপরের ঘরে ওরা দু জন। বাকী দুচার জন কেয়ার টেকার।কুমায়ুঁ মন্ডল বিকাশ নিগমের সাজানো গোছানো ছিম ছাম বাড়ী। কেবল ওদের ঘরের সিলিং এর কাছটা যেন একটু গাছমছমে। সেটা আবিষ্কার করল স্বাগতা। বেয়াড়া বৃষ্টিটাও যেন থামতে চাইছে না। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠান্ডাটা ও যেন বেড়ে চলেছে। দুজনে যত রকম গরম জামা কাপড় ছিল গায়ে দিয়ে জড় হয়ে শুয়ে পডেছে।ঘুম কি আর সহজে আসে। তার উপর স্বাগতা বিড়বিড় করছে এত বড় ঘর আর দুটো প্রানী, আবার সিলিং এর উইন্ড শাটারটায় কিসের যেন একটা আবছা ছায়া দেখা গেল। হঠাৎ সায়নির মনে হল ওর পা দুটো যেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মোজা পরা হয়নি। এই রাতে ওর আর ব্যাগ খুঁজে মোজা পরতে ইচ্ছে হোল না।স্বাগতা বলতে লাগলো দেখ ভুত বাবাজী বোধহয় আবার তোর কষ্ট দেখে তোকে মোজা এনে পরিয়ে দিতেও পারে।এমন জন শূন্য জায়গায় দু একটা অশরীরী কোন্ ব্রিটিশ আমল থেকে থেকেও যেতে পারে বোধ হয়। মনের কোনে ভয় মুখে হাসি বুঝিয়ে রেখে কোন মতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সায়নি।ভোরে স্বাগতার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। আরে ওঠ ওঠ। দেখে সোনালী আলোয় ধ্যানগম্ভীর হিমালয়ের চুড়োয় সূর্যালোকের প্রথম ছোঁয়া। সঙ্গে সঙ্গে পা য়ের দিকে নজর যায় সায়নীর। কি ব্যাপার কাল রাতে তো সে মোজা পরেনি। তা হলে তার পা এ মোজা এলো কি ভাবে ---

*****
স্মৃতি কথা
শিলাই সন্ধিক্ষণ
চিন্ময় সিনহা
গনগনির লালমাটির বেহড় আগুনে লায়েক বিদ্রোহের অস্তগামী সূর্য, আজ রক্তিম। দূরে রেল গাড়ির অপেক্ষায় আপাত মৃত সেতুপথ। শিলাই এর তিরতির স্রোতে শাল পিয়ালের শান্ত ছায়ায় একটু চুপ করে বসো, নিস্তব্ধকে শোন। বাতাসের মর্মর ধ্বনিতে ঈশ্বরীয় স্পর্শে থমকে যাওয়া সময়। শিলাইএর ওপারে যে সবুজ জমি, আলগোছে ছুয়ে আছে বিকেলের হলুদ আলো কালের নৌকোয় বাঁধা তার অসীম শুন্যতা। মৃদু ঢেউয়ে প্রেমিক নদীর উজান, মাছরাঙা, ফিঙে, গাঙশালিখের ঠোঁট ছুঁয়ে যায় জল মাটি ঘাসজমি, সোনালি সপ্নময় গোধূলি বিকেলে ভুলে যাও তোমার অতীত ভবিষ্যৎ। অতল খাদের দিকে তাকিয়ে দেখ লালমাটির বুকে চুপিসারে ছায়া নামছে। টুপকরে সূর্য শিলাইের কোলে ঘুমিয়ে পড়লেই শাল পিয়ালের মাথায় আজ পূর্নিমার চাঁদ ভরিয়ে দেবে স্রোতের আঁচল। এক আঁজলা জল ভরা ঝিনুক মুক্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখ শিলাই সন্ধিক্ষনে সন্ধ্যা নামছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মনের ভেতরে মন
শুভাশিস মুখোপাধ্যায়
চার বন্ধু বসে আছি , দুর্গা মন্দিরের সামনে কদম তলার বাঁধানো বেদিতে । আজ সপ্তমী , নবপত্রিকা এসে গেছে ,ঢাক বাজছে ,চারদিক খুশিতে ভরা । নাগর দোলায় বাচ্ছাদের ভিড় ,অন্যান্য ষ্টলগুলোতে ও বেশ ব্যাস্ততা ।
আমরা গল্পে মেতে আছি ,আমার নজর কিন্তু একটা ১৪-১৫ বছরের মেয়ের উপর , অনেকক্ষন লক্ষ্য করছি একা একা ঘুরছে ,পুজোর সময় যেটা অস্বাভাবিক ,কিছুতেই চিনতে পারছি না ,পাড়ার সবাই কে মোটামোটি চিনি ,যারা বাইরে থাকে , পুজোর সময় আসে তাদেরই কেউ হবে ।
লোক দেখছি ,গল্প ও চলছে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি , দেখি সেই মেয়েটি বেলুনবালার সাথে বেলুন নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে ,বেলুনবালা কিছুতেই দিবেনা ,মেয়েটিও ছাড়বে না ।
আমারা কাছে গেলাম ,আরো অনেকেই জড়ো হয়েছে , সব শোনার পর আমি টাকা দিয়ে দিলাম ।
সবাই বলছে ওকে কেউ চেনে না , দেখে তো ভালো ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে ,মেয়েটি কখনো বলছে তার বাড়ী এখানে ,কখনো অন্য জায়গার নাম বলছে , মনে হলো মানসিক ভারসাম্যহীন ,ভিড় হালকা হয়ে গেল ,আমরা চিন্তা করছি কি করা যায় ,দেখি মা আর পিসিমনি পুজো দিতে এসে ভিড় দেখে এসে দাঁড়িয়েছে ,মেয়েটি সবাই কে দেখছে আর হাসছে ,মা কে সব বললাম , বোন ওর বান্ধবীদের সাথে একটা ষ্টলে আড্ডা জমিয়েছিল ,মা ডেকে মেয়েটিকে বাড়ী নিয়ে যেতে বলল ।
আমরা সবাই ধারে কাছে যত পুজা কমিটি ছিল সবাই কে বলে এলাম এই ব্যাপারে ঘোষনা করার জন্য ।
মেয়েটি আমার বোনের সাথ ছাড়ছে না কিছুতেই ,বোন রেগে অস্হির , মাকে অনেক কথা শোনাল ।
সন্ধ্যের সময় আমরা আড্ডায় মশগুল ,একটা taxi এসে থামল আমাদের দর্গামন্দিরের সামনে , এক ভদ্রলোক ও দুজন মহিলা নামলেন ,লোকটি এসে মেয়েটির ব্যাপারেই খোঁজ খবর নিতেই ,সব বললাম ।
ও দিকে বাড়ীতে নিয়ে যেয়ে দেখি ধুমধুমার কান্ড ,বোন সেজেগুজে ready ,সাথে ওর দু-তিনজন বন্ধু ,ওকে কিছুতেই সাথে নেবে না ,আর মেয়েটিও ওদের সাথ ছাড়বে না ,মা যত বোনকে বোঝায়, বোন তত চিৎকার করে।
ও দিকে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম ,বাবা মা কে পরিচয় করিয়ে দিলাম , ওর বাবার কাছে মেয়েটি কেমন ভাবলেশহীন ভাবে এগিয়ে এসে বলল তোমরা এখন কেন এলে ? আমরা ঠাকুর দেখতে যাচ্ছি ।
ভদ্রলোক ও মহিলা দুজনই কাঁদছেন , বললেন মাঝেমাঝে ওর মন লোপ পায় । বাবা মাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে ওরা মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেল ।
আমার বোন খুশি ,আর আমি আজ সপ্তমীর দিন সন্ধ্যায় কেমন দার্শনিক হয়ে গেলাম ,আমার সপ্তমীর সমাপ্তি।।।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অভিনব অভিজ্ঞতার কাহিনী
তপতী সণ্ণীগ্রাহী
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিত্য অনেক ঘটনাই ঘটে চলেছে। সব ঘটনা মনে রাখার মতো নয় বা প্রয়োজন ও হয় না। কিন্তু না চাইতেও এমন অনেক ঘটনা বা পরিস্থিতির শিকার আমরা হয়ে পড়ি যে তা আমাদের মনে জীবনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়।আমাদের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় ও বাড়তে থাকে।
এমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে চলেছি। একবার নয় দু'দুবার ডাকাতের কবলে পড়েছিলাম। প্রথমবার কলেজজীবনেই আর দ্বিতীয়বার তার অনেক পর -সংসারজীবনে।
1979 সালের 30 শে এপ্রিল কলেজে ইলেভেন ক্লাসের Annual পরীক্ষা হয়ে গেল আর গ্রীষ্মের ছুটি ও পড়ল।বাবা এলেন নিয়ে যেতে,সন্ধ্যে ছ'টার বাস-সেসময় আমাদের বাঁকুড়া লক্ষীসাগর ভায়া বিবড়দা হাড়মাসড়া লাইনে 'মা কালী ভবানী' নামের একখানা বাস চলত -ওটাই ছিল লাস্ট বাস।
বাসে চড়ে তো আসছি,সাড়ে সাতটা নাগাদ বাস পৌঁছোল শিবডাঙার মোড় পেরিয়ে জঙ্গলের মাঝামাঝি রাস্তায়,পৌঁছানো মাত্রই রাস্তায় বাসের সামনে একখানা বড় গাছ পড়ে গেল! কি ব্যাপার কিছু বোঝার আগেই একদল লোক ভোজালি,দা,টাঙি লাঠি সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হল বাসযাত্রীদের ওপর।পুরুষ মানুষদের তো জোর করে নীচে নামাল ওরা-আমার বাবাকেও ।কাউকে মারধর ও করে নি অবশ্য,মহিলা যাত্রীদেরও নামতে বাধ্য করে নি।এখন বুঝি খুবই ভদ্র ও সংস্কারী ডাকাত ছিল ওরা! আসলে ওদের লক্ষ্য ছিল যে সব চাকুরে নিত্যযাত্রী ছিলেন তাঁদের মাসিক বেতন পাওয়ার দিন ছিল কারণ পরের দিন ছিল পয়লা মে। অনেকেরই মাহিনার সম্বল ছিনিয়ে নিয়ে ছিল ওরা ।ডাকাতেরা বিদেয় হওয়ার পর থানায় যাওয়া হল। শেষমেষ বাড়ি পৌঁছুতে রাত এগারোটার ওপর বেজে গেছল।
দ্বিতীয় ঘটনার কথা বলি - আমার কর্তার কর্মসূত্রে আমরা দেওঘর ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা।যে সময়কার ঘটনা তখন আমরা ওঁর অফিস ক্যাম্পাসে কোয়ার্টারেই থাকতাম। বিশাল ক্যাম্পাস আর জায়গাটা রিমোট এরিয়ায়।গোটা আষ্টেক কোয়ার্টার-অফিসের বড়কর্তা হওয়ায় সুবাদে আমাদেরটা আবার একপাশে।সুরক্ষার তেমন ব্যবস্থা নেই-দুজন নাইট গার্ড অবশ্য ছিল তবে তাদের সাড়াশব্দ তেমন পাওয়া যেত না।আমাদেরও অত ভয়ডর লাগত না।
সময়টা ছিল মার্চ মাস 1996 সাল হোলির ঠিক আগে।এইসময় চুরি ডাকাতিও খুব বেড়ে যায় এদিকে।আমার ঘুম এমনিতেই পাতলা ,হঠাৎই অনেক লোকের পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে তখন রাত বারোটা বেজে কুড়ি। তারপরই জোরসে দরজা ভাঙার শব্দ! আরামে ঘুমোচ্ছেন পিতা আর দুই কন্যা(খুবই ছোট তখন) অত শব্দেও ঘুম ভাঙে নি! আমি ডেকে তুললাম-কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমরা!কাউকে ডেকেও কোনও লাভ নেই! ডাকাতরা তখন বারান্দার দরজা ভেঙে ড্রয়িংরুমের দরজা ভাঙছে,উনি গেলেন আটকাতে আর আমি ভাবলাম এইসময় আলমারি থেকে গয়না গুলো সরিয়ে ফেলি! সেটাই ভূল হয়েছিল,তা না করলে অবশ্য ওঁকে ডাকাতের হাতে মার খেতে হত না!পনেরো ষোলো জন তো ছিলই সাথে আগ্নেয়াস্ত্র ও ছিল ।সব ভেতরে ঢুকে ওঁকে লাঠি রড এসব দিয়ে মেরে পিছমোড়া করে বেঁধে কোনায় বসিয়ে দিল-উনি অবশ্য আগেই সারেন্ডার করে দিয়েছিলেন।গয়নাগাঁটি যা ছিল আমার হাত থেকেই ছিনিয়ে নিল!ঘরের জিনিসপত্র সব তছনছ করে,রঙীন টিভি ,দামি কাপড়চোপড় সব নিয়ে চলে গেল!উনি আস্তে আস্তে তখন বললেন 'নিয়ে যেতে দাও ,প্রানে বেঁচে থাকলে সব হবে!'
তারপরও অনেক ছিলাম ওখানে,সেই বিভীষিকা অনেক দিন পর্যন্ত মনে ছেয়ে থাকত!
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
স্মৃতির সরণী বেয়ে
শ্যামলী দাস

পূজো এলেই স্মৃতির চোরাগলি থেকে একটা মুখ ভেসে ওঠে...মুখ বললে ভূল বলা হবে, কারন সেই মুখ টা এখন অস্পষ্ট... অবয়ব বলা যায়...রোগাটে, ছিপছিপে, টলটলে দুটো চোখ, আর মাথার থেকে বড় একটা খোঁপা...আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে,কলকাতা মেডিকেল কলেজের তিনবছরের হোস্টেল জীবনের সহপাঠিনী...... বান্ধবী বললাম না এই কারনে, যে বন্ধুত্বের লেশমাত্র ছিলো না....তার জন্য অবশ্য আমি দায়ী ছিলাম না...আমার মতো ডাকাবুকো,এক্সট্রোভার্ট, মোড়ল টাইপ মানুষের,কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব বেশি সময় লাগতো না...কিন্তু্ু সে ছিলো প্রয়োজনের থেকেও বেশি শান্ত, মিতভাষী.... "অপৃতা".... নাম টা ভূলিনি..... তার গলার স্বর শুনতে পাওয়া ছিলো ভাগ্যের ব্যাপার! মাঝে মধ্যে আমিই ক্লাসে মজা করে হাঁক পাড়তাম" কি অপৃতা, কেমন চলছে? হোস্টেলে কিছু অসুবিধে হচ্ছে না তো?" উত্তরে কখোনো ঘাড় নাড়তো, কখোনো মিনমিন করে দু- একটা শব্দ বেরিয়ে আসতো....স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকার দায়িত্ব টা তিনবছর ধরে আমার কাঁধেই বর্তেছিলো...তাই গান,নাচ,আবৃত্তি,নাটক,সরস্বতীপূজা, নবীনবরন ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেতে থাকতাম...পড়াশুনো টা পার্টটাইম যব ছিলো...এহেন আমার, ঐ "অপৃতা" নামক মিনমিনে গোবেচারা মেয়েটেকে নিয়ে ভাববার সময় ছিলো না....কিন্তু পর্দার পেছনে অন্য খেলা চলছিলো....সে খেলার টের পেলাম শেষদিনে এসে....সেদিন ছিলো হোস্টেলের অন্তিম রাত...স্বভাবতই বিকেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম কলেজস্ট্রিটের রাস্তায়....বৌবাজার,কলেজস্কোয়ার,কফি হাউস,মেট্রো,ভিক্টোরিয়া শেষবারের মতো চক্কর দিয়ে যখন রুমে ফিরলাম, দেখি আমার বেড এর উপর একটা চকচকে কাগজে মোড়া গিফ্ট প্যাক, একটা কার্ড, আর একটা চিঠি....তাড়াতাড়ি চিঠি টা খুললাম.....চিঠির নিচে নাম টা দেখে, যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না....অপৃতা!!!!! এ যে প্রেমপত্র!..... এই তিনবছরে আমার কার্যাবলীরর প্রশস্তি এবং আমার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার প্রকাশ এই চিঠিতে, তাও এই শেষ দিনে.....চোখ জলে ভরে যাচ্ছিলো....যার সাথে ভালো করে কথা বলিনি কোনোদিন! সে কি করে এতো ভালোবাসতে পারলো!!!!! ছুটে গেলাম ওর রুমে....চিঠিটা হাতে নিয়ে, শুধু "অপৃতা" বলে ডেকে, একদৃষ্টি ওর দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইলাম....জড়িয়ে যে ধরবো সে শাহস টাও যেন পাচ্ছি না..শুধু বললাম, "এটা তুই দুবছর আগে লিখলি না কেন? এতো সুন্দর একটা বন্ধুত্ব থেকে বন্চিত করলি আমাকে?."......দূর্গাপূজোর ঠিক পরেই ওর বিয়ের তারীখ পাকা হয়ে গেছিলো....কথা দিলাম ওর বিয়েতে যাবো...না..... যাওয়া হয়নি...আর একটি দিনের জন্য ও "ওর" সাথে আমার দেখা হয় নি......আজ কুড়ি বছর পরে, ফেসবুকে অনেক খুঁজেছি.....ওর মতো লাজুক মেয়েরা হয়তো ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুলতেও লজ্জা পায়....ওর লেখা চিঠিটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম....কয়েকবছর হলো সেটাও খুঁজে পাচ্ছি না.....তবে তার কথা মনে হলে, বুকের ভেতরটায় সেই ভালোবাসার মোচড় টা এখোনো অনুভব করি....যা আর অন্য কোনো কলেজ জীবনের বন্ধুর জন্য হয় না.......

*****
পুজোর প্রেম আর প্রেমের পুজো
শিউলি স্নান
তনিমা হাজরা
নিজমুখে স্বীকার করো বা না ই করো তোমার আমার সবার ই জীবনে কোনো না কোনো বার পূজোয় একটা ফাটাফাটি প্রেমের স্মৃতি আছেই।তবে কিনা সেটি বড়ই ক্ষীণজীবী শিশু। পুজোতেই তার জন্ম আর পূজোতেই তার ইতি। তবু কেন মন টেনে নিয়ে বেড়ায় সেই অনুভব সারাটি জীবন?
সোনালী রোদে আকাশ যখন ঝকমকিয়ে সেজে ওঠে,তার নীলবরণ গায়ে ভাসে ধোপদুরস্ত মেঘেরা, শিউলি, বাজি, ধুপধুনো সব মিলে মিশে একটা মেদুর গন্ধে চারিদিক মাতাল নতুন শাড়িজামা, সেন্ট, সাজগোজ এর নান্দনিক আধার, মা- জেঠিমাদের পাক দেওয়া নাড়ুর গন্ধ,নিমকির মুচমুচে স্বাদ,বাবাদের আড্ডার উচ্চকিত হাসি। তার মাঝে উঠতি কচিকাঁচাদের সদ্য গজানো রোমান্স যেন বুকের দরজায় দুদ্দাড় ঘা মেরে দৌড় মারে অজানায়।
আমাদের কালে প্রেম বা ভালোলাগা হতো একালে রিলেশনশিপ হয়। তবুও হয় হতেই হয় এসব কিছু। এটাই তো বাঁচার আধার।ভালবাসা ছাড়া জীবন যেন মন্ডপহীন প্রতিমা।
ষষ্ঠীর বোধনের সময় প্রথম তার চোখে চোখ।
সপ্তমীর সারাটা দিন শুধু দৃষ্টি পথে তার আনাগোনা খুঁজে ফেরা।
অষ্টমীর অঞ্জলিতে তার সাথে এক ব্যাচে সামিল হবার জন্য কি দুর্দান্ত হুটোপুটি।
সন্ধি পুজোর রাতে প্যান্ডেলে তার পাশের চেয়ারটা জোগাড় করার জন্য কি হ্যাংলামি।
নবমীর সারাটা দুপুর তার জন্য আর পাঁচজনার সাথে আড্ডায় কি যে অবান্তর বকেছি নিজেই জানিনা।
সে পাশের বাড়ির কাকিমার দাদার মেয়ে। এবার পুজোয় পিসির বাড়ী বেড়াতে এসেছে।
"ঝিমলি নাম কিরে তোর মামার মেয়ের"? প্রশ্নটা অবান্তর।
অচেনা মেয়েটি এই চারদিনের পরিচয়ে কি অমোঘ টান তোমার, ওগো সুচরিতা তুমি কি একবার আমার স্বপ্নে আসবে প্লিজ?কোন কলেজ? কোথায় বাড়ি? তোমায় নিয়ে কবিতা লেখা হয়ে গেল কিছু। কোনোদিনও পড়া হবে না সেই কবিতা তোমার।
তারও কি মনে পাক খায় এসব কিছু ? হালকা ঘাসের মতো পেলব দাড়িতে প্রগলভ সেই ছেলে যে যেচে এসে অষ্টমীর প্রসাদ দিয়ে গেছিল তাকে।একপলকে দেখেছে তার ডান ভুরুর ওপরে কাটা দাগ।
ভারি পাগল কিন্তু!!! দশমীর সকালে যখন সেজেগুজে মন্ডপে আসছে পিসিমণির বাগানের শিউলি তলা পেরিয়ে হঠাৎ যেন কোথা থেকে এসে আস্ত শিউলি গাছটা প্রবল শক্তিতে ঝাঁকিয়ে সারাগায়ে শিউলি আর ভোরের শিশির ঝরিয়ে দিয়ে বলেছিল, "নাও তোমাকে শিঊলি দিয়ে স্নান করিয়ে দিলাম"।
এত প্রতিবাদী মেয়েটাও রাগেনি একটুও সব সাজ ভিজে গেল বলে। শুধু চেয়েছিল তার চোখে একবার।।আর কি কোন দিন দেখা হবে তার সাথে? আর কি এমন করে কেউ তাকে করাবে শিউলি স্নান?????
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------