মনে পড়ে:-
পুরানো সেই দিনের কথা শুনতে শুনতে আমারো মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব নানা রঙের দিনগুলিকে। কিন্তু সেই দিনগুলির বর্ণ-গন্ধ-রস সবই তো অন্যরকম ছিল। তোমাদের ভাল লাগবে না হয়তো। তবু---- এই তবুটার হাত থেকে ছুটি পেতেই না আজকের এই কলম ধরা !
খুব ছোট্টবেলার কথা তেমনভাবে মনে পড়ে না। লাভা -আলগাড়া- কালিম্পং হয়ে বাবা যখন মাদারিহাটে বদলি হয়ে এলেন তখন আমি বছর ছয়েকের। তখনই প্রথম পেলাম জীবন্ত বনধুর দল। তার আগে তো কাঞ্চনজঙ্ঘা আর গাছপালা ছাড়া বনধু ছিল না কেউ।
মাদারিহাটে এসে প্রথম সমতলভূমি। গোড়ায় হাঁটতে একটু থতমত লাগত ঢালু পথে হেঁটে বড় হওয়া এই পা দুটোর। গাছপালা ঘেরা ক্যাম্পাসে থাকত বনবিভাগের হাতীরা। সেইপ্রথম আমার কাছথেকে হাতী দেখা, হাতী চড়া।
এখানে এসেই পুরোদস্তুর চামচা হয়ে গেলাম আমাদের আরদালি বাহাদুরদাজুর ছেলের। সে ভারী গুণী লোক। দুটো লম্বা বাঁশের রণপা চড়ে সে দৌড়ে বেড়াত। গাছ বাইতে পারত কাঠবিড়ালীর ক্ষিপ্রতায়। তার কাছেই তো শিখলুম কি করে গাছে চড়তে হয়। আমাকে একটা ছোট্ট রণপাও বানিয়ে দিয়েছিল। আর শিখিয়েছিল ফুলের বৃষ্টি। ভোরে যখন সবাই মিলে ফুল কুড়াতে যেতাম, তখন আমাদের শিউলি গাছের তলায় দাঁড় করিয়ে গাছ ঝাঁকিয়ে দিত-- আর টুপটাপ করে মুখে মাথায় ঝরে পড়ত শিউলির দল। তারপর হৈ হৈ করে ফুল কুড়ানোর পালা।
পুরানো সেই দিনের কথা শুনতে শুনতে আমারো মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব নানা রঙের দিনগুলিকে। কিন্তু সেই দিনগুলির বর্ণ-গন্ধ-রস সবই তো অন্যরকম ছিল। তোমাদের ভাল লাগবে না হয়তো। তবু---- এই তবুটার হাত থেকে ছুটি পেতেই না আজকের এই কলম ধরা !
খুব ছোট্টবেলার কথা তেমনভাবে মনে পড়ে না। লাভা -আলগাড়া- কালিম্পং হয়ে বাবা যখন মাদারিহাটে বদলি হয়ে এলেন তখন আমি বছর ছয়েকের। তখনই প্রথম পেলাম জীবন্ত বনধুর দল। তার আগে তো কাঞ্চনজঙ্ঘা আর গাছপালা ছাড়া বনধু ছিল না কেউ।
মাদারিহাটে এসে প্রথম সমতলভূমি। গোড়ায় হাঁটতে একটু থতমত লাগত ঢালু পথে হেঁটে বড় হওয়া এই পা দুটোর। গাছপালা ঘেরা ক্যাম্পাসে থাকত বনবিভাগের হাতীরা। সেইপ্রথম আমার কাছথেকে হাতী দেখা, হাতী চড়া।
এখানে এসেই পুরোদস্তুর চামচা হয়ে গেলাম আমাদের আরদালি বাহাদুরদাজুর ছেলের। সে ভারী গুণী লোক। দুটো লম্বা বাঁশের রণপা চড়ে সে দৌড়ে বেড়াত। গাছ বাইতে পারত কাঠবিড়ালীর ক্ষিপ্রতায়। তার কাছেই তো শিখলুম কি করে গাছে চড়তে হয়। আমাকে একটা ছোট্ট রণপাও বানিয়ে দিয়েছিল। আর শিখিয়েছিল ফুলের বৃষ্টি। ভোরে যখন সবাই মিলে ফুল কুড়াতে যেতাম, তখন আমাদের শিউলি গাছের তলায় দাঁড় করিয়ে গাছ ঝাঁকিয়ে দিত-- আর টুপটাপ করে মুখে মাথায় ঝরে পড়ত শিউলির দল। তারপর হৈ হৈ করে ফুল কুড়ানোর পালা।
মনে পড়ে: (2) –
বনবিভাগের হাতীদের সুন্দর সুন্দর নাম- জয়মালা, রাজলক্ষ্মী। তারাও আমাদের বনধু। তাদের পিঠে চড়ে বসতাম প্রায়ই। এক আধবার বাবার সাথে জঙ্গলেও গেছি হাতীর পিঠে চড়ে।জয়মালার ছেলে বীরবাহাদুর আমার ভারী বনধু ছিল। ছোট্ট হাতীটার খুব পছন্দের খেলা ছিল পরপর সাজিয়ে রাখা কাঠের গুড়িগুলোকে ধাক্কা মেরে ছড়িয়ে ফেলা।আমরা খুব মজা পেতাম। একবার এই করতে গিয়ে বীর তাল সামলাতে না পেরে পড়ল নতুন কাঁটাতারের বাণ্ডিলের ওপর। বাছার ওজনটি তো কম নয়!কাঁটা ফুটলো গভীর হয়ে।সে কি চিল চ্যাঁচানি বেচারার। অতি কষ্টে ছাড়ানো তো হল। কিন্তু ওষুধ লাগাতে দেবে না কিছুতেই। লোকজন তো হয়রাণ হয়ে গেল। এবার এগিয়ে এল ওর মা আর মাসী। পা দিয়ে চেপে ধরল বাচ্চাটাকে। সবাই মিলে ওষুধ লাগিয়ে দিল তখন। এইভাবে চলল কিছুদিন। সেরে ওঠার পরে বীরবাহাদুর আর গুড়িগুলোকে ফেলত না। গার্ডদাদারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। রোজ রোজ গুড়ি সাজানো কি মুখের কথা!
রাতটা ছিল বুনো হাতীদের জন্য। রাতে ক্যাম্পাসের গেট খোলা রাখতে হত। হাতীরা এ গেট দিয়ে ঢুকে ও গেট দিয়ে বেরিয়ে যেত। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে গা ঘষে নিত আমাদের লগ হাউসে। বাড়ীটা দোলনা হয়ে যেত তখন।
এইসব করতে করতে তিনবছর পার হয়ে গেল। বাবা এবার বদলি হলেন ডাউহিলে। Forest Training School এর শিক্ষক হয়ে। সেই প্রথম নিজের বাড়ীতে electricity দেখা। একটা কথা ডাউহিলে এসে উপলব্ধি করলাম আমার বাড়ী এই পাহাড়েই। কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তা আর জঙ্গল ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।
এই রোদ এই কুয়াশার খেলা, কাঞ্চনজঙ্ঘার রঙবদল, ধুবি গাছের সরসরানি আর বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ী ঝর্ণা- সব মিলিয়ে সে এক রূপকথার দেশ। বাড়ীর গা ঘেঁষা ধুবির জঙ্গলে ভোররাতের দিকে ভালুক আসত কুটুস ফল খেতে।অনেকটা কাঠবাদামের মতো এই ফল আমরাও কুড়িয়ে খেয়েছি কত। আরো একটা প্রিয় খেলা ছিল। ট্রাইসাইকেলে বসে ঢালের দিকে মুখ করে প্যাডেল থেকে পা তুলে নিতাম।ক্রমশ: গতি বাড়তে থাকত। বাড়ী থেকে বাবার অফিস অবধি গিয়ে ব্রেক। পিছন পিছন ভাই আসত দৌড়ে। তারপর সাইকেল ঠেলে ঠেলে ওপরে নিয়ে যাওয়া। এবার ভাই বসবে আর আমি দৌড়াবো।
মনে পড়ে:- (3)
এত সুখ কি আর কপালে সয়! বাবা ছমাস থাকতেন ডাউহিলে আর বাকী ছয়মাস ছাত্রদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন সারা পশ্চিমবাংলা জুড়ে। জঙ্গল প্রদক্ষিণ আর কি। কোথাও তিনদিন তো কোথাও দশদিন। পড়াশোনা চৌপাট। তাই আমাকে পাঠান হল কলকাতায় মাসীর বাড়ীতে। ভাই ছোট বলে থেকে গেল।
1970-1971 এই দুবছর কলকাতায় খারাপ কাটে নি। পাড়া আর স্কুলে নতুন নতুন বনধু বান্ধবী জুটে গেল। ওই সময় পড়ি স্বপনবুড়োর “কিশের সংকল্প”। বইটা আমাদের খুব প্রভাবিত করেছিল।আমরা নিজেরা বই দান করে ও চাঁদা দিয়ে একটা class library বানিয়েছিলাম। আমরাই লাইব্রেরিয়ান আমরাই পাঠক। বেশ ভাল চলত কিন্তু।
আরেকটা কাজ করেছিলাম।বাড়ীর সামনের ফুটপাথগুলোয় লোকের ফেলা ময়লা জমে ঢিবি তৈরী হয়েছিল। বনধুরা মিলে এক রবিবারে আমরা নেমে পড়লাম সাফাই অভিযানে। খুব মজা লেগেছিল। মাটি খুঁড়ে ছোট ছোট বালতি করে এক জায়গায় জমা করলাম। আগের দিন কর্পোরেশনের ঝাড়ুকাকুকে বলে রেখেছিলাম। সে দুপুরবেলা এসে সব ময়লা নিয়ে চলে গেল।
ও-মা, পরের রবিবার আবার যখন দল বেঁধে বেরিয়েছি, তখন দেখি ঝাড়ুকাকু তার আরো দুজন বনধুকে নিয়ে এসেছে। ব্যস, একদিনেই সব পরিস্কার। পাড়া ঝকঝকে। সবচেয়ে ভাল কথা- আর কেউ রাস্তায় নোংরা ফেলত না তারপর থেকে। কোন প্রচার ছাড়াই “স্বচ্ছ” পাড়া হয়ে গেল এলাকাটা! এখনো যখন লেকরোডের রাস্তা দিয়ে যাই, সেই স্মৃতি মনে পড়ে।
Class VI এ উঠে আবার ফিরে এলাম ডাউহিলে। পাকদণ্ডী বেয়ে চোরাবাটো ধরে স্কুলে যাওয়া। ঢাল ধরে গড়িয়ে গেলে বেশ চটপট নেমে আসা যেত অনেকটা পথ। মাঝে মাঝে এ ওর ঘাড়ে গড়িয়ে গেলে নামাটা আরো তাড়াতাড়ি হত। Momentum এর অঙ্ক না জানলেও প্রয়োগ করতে অসুবিধা হত না কিছু। বর্ষাকালে রাস্তায় খুব জোঁক। অনেকে ভয় পেত। নুন ছাড়াই জোঁক ছাড়াতে পারতাম বলে বনধুমহলে আমার ভাল কদর ছিল। বাড়ী ফিরলে মা ঘরে ঢুকতে দিত না। সব জোঁক গা থেকে ফেললে তবে অনুমতি মিলত। উ: বড্ডো জোঁক ছিল ওখানে।
পুজোর আগে সারা পাহাড় ভরে যেত বনফুলে। নানা রঙে রঙিন মাঠ-জঙ্গলকে কেমন যেন অচেনা মনে হত। পুজো হত একটা বিরাট হলঘরে। October এর ঠাণ্ডায় সন্ধ্যাতে বাইরে থাকা সম্ভব ছিল না। ঘরোয়া পরিবেশের পুজোর সেই আনন্দ পরবর্তীকালের কোন পুজোতেই আর ফিরে পাই নি।
স্কুল থেকে আর একটু পথ নেমে গেলেই কার্শিয়ং। টয়ট্রেন এসে দাঁড়াত সেখানে। কিছু কিনতে হলে আমাদের চার কিলোমিটার নেমে আসতে হত এখানেই। ডাউহিলে তখন একটা দেশলাইয়ের দোকানও ছিল না। তিনটে বড় residential school ছিল কিন্তু। Gothel’s School, Victoria Boys’ School and Dowhill Convent. Forest Training School তো ছিলই।
তাই পরিবেশটাও ছিল একটু অন্যরকম। দেশী-বিদেশী আবহাওয়ার একটা চমৎকার মিশ্রণ ঘটেছিল। উগ্রতাবিহীন সেই নরম পরিবেশ আজও আমার স্বপ্নে জড়িয়ে আছে।
বনবিভাগের হাতীদের সুন্দর সুন্দর নাম- জয়মালা, রাজলক্ষ্মী। তারাও আমাদের বনধু। তাদের পিঠে চড়ে বসতাম প্রায়ই। এক আধবার বাবার সাথে জঙ্গলেও গেছি হাতীর পিঠে চড়ে।জয়মালার ছেলে বীরবাহাদুর আমার ভারী বনধু ছিল। ছোট্ট হাতীটার খুব পছন্দের খেলা ছিল পরপর সাজিয়ে রাখা কাঠের গুড়িগুলোকে ধাক্কা মেরে ছড়িয়ে ফেলা।আমরা খুব মজা পেতাম। একবার এই করতে গিয়ে বীর তাল সামলাতে না পেরে পড়ল নতুন কাঁটাতারের বাণ্ডিলের ওপর। বাছার ওজনটি তো কম নয়!কাঁটা ফুটলো গভীর হয়ে।সে কি চিল চ্যাঁচানি বেচারার। অতি কষ্টে ছাড়ানো তো হল। কিন্তু ওষুধ লাগাতে দেবে না কিছুতেই। লোকজন তো হয়রাণ হয়ে গেল। এবার এগিয়ে এল ওর মা আর মাসী। পা দিয়ে চেপে ধরল বাচ্চাটাকে। সবাই মিলে ওষুধ লাগিয়ে দিল তখন। এইভাবে চলল কিছুদিন। সেরে ওঠার পরে বীরবাহাদুর আর গুড়িগুলোকে ফেলত না। গার্ডদাদারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। রোজ রোজ গুড়ি সাজানো কি মুখের কথা!
রাতটা ছিল বুনো হাতীদের জন্য। রাতে ক্যাম্পাসের গেট খোলা রাখতে হত। হাতীরা এ গেট দিয়ে ঢুকে ও গেট দিয়ে বেরিয়ে যেত। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে গা ঘষে নিত আমাদের লগ হাউসে। বাড়ীটা দোলনা হয়ে যেত তখন।
এইসব করতে করতে তিনবছর পার হয়ে গেল। বাবা এবার বদলি হলেন ডাউহিলে। Forest Training School এর শিক্ষক হয়ে। সেই প্রথম নিজের বাড়ীতে electricity দেখা। একটা কথা ডাউহিলে এসে উপলব্ধি করলাম আমার বাড়ী এই পাহাড়েই। কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তা আর জঙ্গল ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।
এই রোদ এই কুয়াশার খেলা, কাঞ্চনজঙ্ঘার রঙবদল, ধুবি গাছের সরসরানি আর বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ী ঝর্ণা- সব মিলিয়ে সে এক রূপকথার দেশ। বাড়ীর গা ঘেঁষা ধুবির জঙ্গলে ভোররাতের দিকে ভালুক আসত কুটুস ফল খেতে।অনেকটা কাঠবাদামের মতো এই ফল আমরাও কুড়িয়ে খেয়েছি কত। আরো একটা প্রিয় খেলা ছিল। ট্রাইসাইকেলে বসে ঢালের দিকে মুখ করে প্যাডেল থেকে পা তুলে নিতাম।ক্রমশ: গতি বাড়তে থাকত। বাড়ী থেকে বাবার অফিস অবধি গিয়ে ব্রেক। পিছন পিছন ভাই আসত দৌড়ে। তারপর সাইকেল ঠেলে ঠেলে ওপরে নিয়ে যাওয়া। এবার ভাই বসবে আর আমি দৌড়াবো।
মনে পড়ে:- (3)
এত সুখ কি আর কপালে সয়! বাবা ছমাস থাকতেন ডাউহিলে আর বাকী ছয়মাস ছাত্রদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন সারা পশ্চিমবাংলা জুড়ে। জঙ্গল প্রদক্ষিণ আর কি। কোথাও তিনদিন তো কোথাও দশদিন। পড়াশোনা চৌপাট। তাই আমাকে পাঠান হল কলকাতায় মাসীর বাড়ীতে। ভাই ছোট বলে থেকে গেল।
1970-1971 এই দুবছর কলকাতায় খারাপ কাটে নি। পাড়া আর স্কুলে নতুন নতুন বনধু বান্ধবী জুটে গেল। ওই সময় পড়ি স্বপনবুড়োর “কিশের সংকল্প”। বইটা আমাদের খুব প্রভাবিত করেছিল।আমরা নিজেরা বই দান করে ও চাঁদা দিয়ে একটা class library বানিয়েছিলাম। আমরাই লাইব্রেরিয়ান আমরাই পাঠক। বেশ ভাল চলত কিন্তু।
আরেকটা কাজ করেছিলাম।বাড়ীর সামনের ফুটপাথগুলোয় লোকের ফেলা ময়লা জমে ঢিবি তৈরী হয়েছিল। বনধুরা মিলে এক রবিবারে আমরা নেমে পড়লাম সাফাই অভিযানে। খুব মজা লেগেছিল। মাটি খুঁড়ে ছোট ছোট বালতি করে এক জায়গায় জমা করলাম। আগের দিন কর্পোরেশনের ঝাড়ুকাকুকে বলে রেখেছিলাম। সে দুপুরবেলা এসে সব ময়লা নিয়ে চলে গেল।
ও-মা, পরের রবিবার আবার যখন দল বেঁধে বেরিয়েছি, তখন দেখি ঝাড়ুকাকু তার আরো দুজন বনধুকে নিয়ে এসেছে। ব্যস, একদিনেই সব পরিস্কার। পাড়া ঝকঝকে। সবচেয়ে ভাল কথা- আর কেউ রাস্তায় নোংরা ফেলত না তারপর থেকে। কোন প্রচার ছাড়াই “স্বচ্ছ” পাড়া হয়ে গেল এলাকাটা! এখনো যখন লেকরোডের রাস্তা দিয়ে যাই, সেই স্মৃতি মনে পড়ে।
Class VI এ উঠে আবার ফিরে এলাম ডাউহিলে। পাকদণ্ডী বেয়ে চোরাবাটো ধরে স্কুলে যাওয়া। ঢাল ধরে গড়িয়ে গেলে বেশ চটপট নেমে আসা যেত অনেকটা পথ। মাঝে মাঝে এ ওর ঘাড়ে গড়িয়ে গেলে নামাটা আরো তাড়াতাড়ি হত। Momentum এর অঙ্ক না জানলেও প্রয়োগ করতে অসুবিধা হত না কিছু। বর্ষাকালে রাস্তায় খুব জোঁক। অনেকে ভয় পেত। নুন ছাড়াই জোঁক ছাড়াতে পারতাম বলে বনধুমহলে আমার ভাল কদর ছিল। বাড়ী ফিরলে মা ঘরে ঢুকতে দিত না। সব জোঁক গা থেকে ফেললে তবে অনুমতি মিলত। উ: বড্ডো জোঁক ছিল ওখানে।
পুজোর আগে সারা পাহাড় ভরে যেত বনফুলে। নানা রঙে রঙিন মাঠ-জঙ্গলকে কেমন যেন অচেনা মনে হত। পুজো হত একটা বিরাট হলঘরে। October এর ঠাণ্ডায় সন্ধ্যাতে বাইরে থাকা সম্ভব ছিল না। ঘরোয়া পরিবেশের পুজোর সেই আনন্দ পরবর্তীকালের কোন পুজোতেই আর ফিরে পাই নি।
স্কুল থেকে আর একটু পথ নেমে গেলেই কার্শিয়ং। টয়ট্রেন এসে দাঁড়াত সেখানে। কিছু কিনতে হলে আমাদের চার কিলোমিটার নেমে আসতে হত এখানেই। ডাউহিলে তখন একটা দেশলাইয়ের দোকানও ছিল না। তিনটে বড় residential school ছিল কিন্তু। Gothel’s School, Victoria Boys’ School and Dowhill Convent. Forest Training School তো ছিলই।
তাই পরিবেশটাও ছিল একটু অন্যরকম। দেশী-বিদেশী আবহাওয়ার একটা চমৎকার মিশ্রণ ঘটেছিল। উগ্রতাবিহীন সেই নরম পরিবেশ আজও আমার স্বপ্নে জড়িয়ে আছে।
No comments:
Post a Comment