১-ম পর্ব
১৯৮৫ সালে আমি বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে স্নাতকস্তরে ভর্তি হই। তখন আমাদের স্কুলডাঙার ভাড়াবাড়িতে আমি আর বাবা ডঃ রবীন্দ্রনাথ সামন্ত দুজনে থাকতাম। শঙ্করী নামের এক বাউরী বউ আমাদের সমস্ত কাজ আর রান্নাবান্না করে দিতো। বাবা তাঁর কলেজ, ছাত্রছাত্রী, লেখালেখি, এ, অবান্তর পত্রিকা, সভা সমিতি, নাটক - এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। প্রায়ই বেশ কয়েকদিনের জন্য কলকাতা বা অন্য কোথাও চলে যেতেন। আমিও সদ্য কলেজে ঢুকে ছিন্ন বাধা বালকের ন্যায় নানা গুরুতর বিষয় নিয়ে উড়ে বেড়াতাম। খাওয়াদাওয়ার কোনো ঠিক থাকতো না।
১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়বর্ষে ওঠার পর নানা অসুবিধা দেখা দেওয়ায় আমি ব্রাউন হোস্টেলে চলে আসি। নিউ ব্লকের একতলায় একটা ঘরে কিছুদিন থাকার পর দোতলায় ৮৫ নম্বর ঘরে আমি বিরাজিত হই। এই হোস্টেলের দুটো বিশাল ব্লকে মোট ১২০ টা ঘর ছিলো। প্রতিটা ঘরে একজন করে আবাসিক থাকতো। জানালাগুলো ছিলো বিশাল বড়, প্রায় দরজার মাপে। তাতে কোনো গরাদ ছিল না। দরজা এবং জানালার পাল্লায় খড়খড়ি লাগানো ছিলো। আমরা প্রায়ই সেই জানালা দিয়ে কার্নিশে নেমে এর ওর ঘরে ঢুকে রেখে দেওয়া খাবার খেতাম। কোনো প্রিয় জিনিস নিয়ে পালিয়ে আসতাম। পড়লে যে মাথা বা হাত পা ভাঙবে সে ভয় বিশেষ ছিলো না। দুটো ব্লকের মাঝে রান্নাঘর, বিরাট খাবার ঘর, তার দোতলায় টিভি-ঘর। রান্নাঘরের লাগোয়া হোস্টেল ইনচার্জ ধনেশদার অফিস। খাবারঘরের পিছনে কুয়ো, স্নানের বিরাট চৌবাচ্ছা সমেত বিরাত চাতাল। তারপর একপ্রান্তে অনেকগুলো পায়খানাঘর। প্রতিটা ব্লকে দোতলায় ওঠার জন্য দুটো করে সিঁড়ি। আমার ঘরটা থেকে চার্চের পাশ দিয়ে আমাদের স্কুলডাঙার রাস্তাটা পরিষ্কার দেখা যেতো। চট্টল বেকারি, সিপিএম পার্টি অফিস ছাড়িয়ে গান্ধীবিচার পরিষদ পর্যন্ত সহজেই নজর চলতো।
ব্রাউন হোস্টেলের আকৃতিটা ইংরাজি ইউ এর মতো। নীচের তলায় এই ইউ-এর দুই প্রান্তে লোহার গরাদ বসানো জানালা। এই জানালাগুলোর গরাদগুলো কাটা ছিলো। আমাদের কয়েক প্রজন্ম আগের কোনো ব্যাচের দাদারা নাইট শো সিনেমা দেখে ভিতরে ঢোকার সুবিধের জন্য এই গরাদগুলোর সাবাড় মিটিয়ে রেখেছিলো। অতি মহৎ কাজ করেছিলো তারা। আমরা প্রায় রোজই মহানন্দে এই বাতায়নপথে গভীররাতে হোস্টেলে ঢুকতাম। একটু কষ্ট করলে সাইকেলও চালান করা যেতো। আহা দাদাদের কি দূরদৃষ্টিই না ছিলো।
পুজোর ছুটিতে সবাই বাড়ি চলে যেতো। হোস্টেল পুরো ফাঁকা। আমি কিন্তু যেতাম না। ওই বিশাল হোস্টেলে একলাই থাকতাম। ঠাকুমা ছাড়া আমার বাড়ি ফেরার পিছুটান বিশেষ ছিলো না। পুজোর কটা দিন কাটিয়ে তারপর তারকেশ্বর ফিরতাম।
সেবার ১৯৮৭ সালের পুজোতেও বাড়ি যাই নি। যতদূর মনে পড়ছে সেটা ছিল ষষ্টির দিন। আমি কলেজমোড়ের ঠেকে গিয়ে দাদুর চা দোকানে লঙ আর চা খেয়ে পান চিবুতে চিবুতে সিগারেটে টান মেরেছি। সেদিন আমাদের জমজমাট আড্ডাও ছিলো ফাঁকা। জহরদারও দেখা নেই। আমি আর অসীমদা ( নন্দী ) হাঁটতে হাঁটতে মাচানতলা পেরিয়ে, মসজিদ ছাড়িয়ে, হ্যানিডিউ মিষ্টির দোকান বাঁয়ে রেখে বাজারের মধ্য দিয়ে গেলাম রাণিগঞ্জের মোড়ের মাদ্রাজ কাফেতে। এই মোড়টা আমাদের আর একটা আড্ডার জায়গা ছিলো। বাজারে থিকথিকে ভিড়। আশেপাশের গ্রামগঞ্জ থেকে আসা এবং শহরের লোকজনেরা হামলে পড়ে শেষবেলার কেনাকাটা করছে। পা ফেলা দায়।
আমরা রাণিগঞ্জের মোড়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছি, লোক দেখছি। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছটা হবে। হঠাৎ বাজারের দিকে একটা বিশাল বোমের আওয়াজ হল। আর তারপরই বাজারের দিক থেকে মানুষজন পড়ি কি মড়ি করে দৌড়ে আসতে লাগলো। কে উল্টে পড়লো, কে তার উপর দিয়েই চলে গেলো। মুহুর্তে একটা ছত্রভঙ্গ বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবস্থা। কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না কি ঘটেছে। চারপাশের দোকানগুলোর সটাসট ঝাঁপ পড়ে গেলো। আমরাও ছুটে মাদ্রাজ কাফেতে ঢুকলাম। মালিক গণেশদা দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিলেন। ভিতরে আমরা কজন ওষ্ঠাগতপ্রাণ মানুষ ঢিপঢিপ বুকে কি হয় কি হয় আশঙ্কায় দুনিয়ার সব সম্ভাব্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম।দেখে ভিতরে ঢোকার সুবিধের জন্য এই গরাদগুলোর সাবাড় মিটিয়ে রেখেছিলো। অতি মহৎ কাজ করেছিলো তারা। আমরা প্রায় রোজই মহানন্দে এই বাতায়নপথে গভীররাতে হোস্টেলে ঢুকতাম। একটু কষ্ট করলে সাইকেলও চালান করা যেতো। আহা দাদাদের কি দূরদৃষ্টিই না ছিলো।
২ য় পর্ব
সব যণ্ত্রণাই একসময় শেষ হয়। আমাদেরও হোলো। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে বাইরের দাপাদাপি, ছুটোছুটি, পুলিশের গাড়ির আওয়াজ এসব বন্ধ হোলো। গণেশদা ভয়ে ভয়ে দরজা খুললেন। আমরাও অতি সন্তর্পণে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বাইরে বেরোলাম। ভাবটা এমনই যে একটু শব্দ হলেই সোজা কাফেতে গিয়ে ঢুকবো আবার। বাইরের রাস্তা ফাঁকা। একটা দুটো করে দোকানপাট আাবার খুলছে। সবাই উদ্বিগ্ন। একে ওকে জিজ্ঞেস করছে ব্যাপারটা কি ঘটেছে। যা জানা গেলো তা মারাত্মক। ওই ভিড়ের মধ্যেই প্রধান চকবাজারের গলিতে একটা সোনারূপোর দোকানে তাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা দোকানের মালিককে সামনাসামনি গুলি করে সোনাদানা হাতিয়ে নিয়ে বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে গ্যাছে। দোকানদার বাঁকুড়া শহরেরই পুরোনো বাসিন্দা। নামটা শুনে আমি তো চমকে উঠলাম। আরে ও তো আমার বন্ধু সন্টুর বাবা। ওদের দোকানটা বাজারের ইন্দিরা স্ট্যাচুর পাশে বাঁদিকের গলিতে। অসীমদাও ওদেরকে বিলক্ষণ চেনে। আমরা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। লোকে নানা কথা বলতে লাগলো। কেউ বলল, এসব তলে তলে ডাকাতদের সঙ্গে চোরাই মালের কারবার করে। তারই ভাগবাঁটোয়ারায় গন্ডগোল হওয়ায় মেরে দিয়ে গ্যাছে। কেউ বা বলল, না না এ নিছকই ডাকাতি। কেউ বা পুলিশের বাপ-ঠাকুর্দা উদ্ধার করতে লাগলো। কেউবা বাঁকুড়া আগে কত ভালো ছিলো সে জল্পনা করতে লাগলো। আমরা চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছি। সন্টুর জন্য মন খারাপ হয়ে গ্যালো। গণেশদা বললেন, তোমরা এবার চলে যাও। কি থেকে কি যে হয় বলা তো যায় না। আমিও বন্ধ করে দিচ্ছি। এই বলে উনি দোকান বন্ধ করতে লাগলেন। আমরা সোজা না ফিরে শাঁখারীপাড়ার রাস্তা দিয়ে ঘুরে গিয়ে মাচানতলায় উঠলাম। সেখান থেকে অসীমদা বাড়ি চলে গ্যলো। আমি আবার কলেজমোড়ে এলাম হাঁটতে হাঁটতে।
কলেজমোড়ের দোকানপাট খোলা ছিলো। সেখানেও এই আলোচনা চলছে। আমি রাণিগঞ্জের মোড় থেকে আসছি শুনে সবাই হামলে পড়লো। যা জানি বললাম। সেদিন মনে হয় এখানেই রাতের খাওয়া পাঁউরুটি মিষ্টি খেয়েছিলাম। তারপর কলেজের মধ্যে দিয়ে পা বাড়ালাম হোস্টেলের দিকে।
আবার সেই গরাদকাটা খোলা বাতায়নপথে ঢুকলাম হোস্টেলে। টিমটিম করে আলো জ্বলছে। টানা বারান্দায় সারি সারি ঘরে তালা ঝুলছে। বেশ ভুতুড়ে পরিবেশ। গা ছমছম করছে। চল্লিশ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা খ্রিস্টান কলেজের রাতের পরিবেশ অদ্ভুত মায়াময় ও একই সঙ্গে ভুতুড়ে। এই বিশাল চত্বরে রাতের বেলায় প্রায়ই নানা অসামাজিক লোকজন ঘোরাফেরা করতো। রাতে পুলিশের টহলদারি থাকতো। সাদা পোশাকের পুলিশও ঘুরতো। এই বিরাট হোস্টেলে যে কেউ এসে ঢুকতে পারে। কাজেই ভয় পাওয়ার বাস্তব কারণও ছিলো যথেষ্ট। ব্যক্তিগতভাবে আমার রাজনৈতিক কারণেও ভয় ছিলো। দুরুদুরু বুকে চৌবাচ্ছায় হাত পা ধুয়ে দোতলায় আমার ঘরের চাবি খুললাম।
৩ য় পর্ব
হোস্টেলে আমার ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকে ডানদিকে একটা দেওয়াল-তাক। তাতে বইপত্র, খাতা ইত্যাদি সুন্দর করে গোছানো থাকতো। পড়াশোনার পাট তখন বিশেষ রাখি নি। তাই বইপত্র ছড়ানো না থেকে গোছানোই থাকতো। আর থাকতো ব্রাশ, জিভছোলা, পেষ্ট, সার্ফ, দাড়ি কামানোর সরঞ্জাম, আফটার শেভ লোশন, পাউডার, সাবানদানী, একটা স্টীলের থালা আর গ্লাস, একটা বাটি আর কিছু টুকিটাকি। তাকের নীচে থাকতো একটা প্লাস্টিকের বালতি আর মগ। তারপরে ঢাকনা পরানো দুদুটো টেবিল একসঙ্গে লাগানো। দোতলার প্রায় সবঘরেই দুটো করে টেবিল থাকতো। যদিও থাকার কথা একটা। আসলে উপরের ঘরগুলোতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের ছেলেরা থাকতো। তাদের দাদাগিরি দ্যাখানোর একটা উপায় হচ্ছে এই দুটো করে টেবিল রাখা। আমিই বা বাদ যাই কেন!! এদিকে বেচারা প্রথমবর্ষের বা একাদশ শ্রেণীর আবাসিকরা প্রায়ই টেবিল পেতো না। আমি হোস্টেলে ঢোকার প্রথমদিকে বেশ কিছুদিন প্রাণীবিদ্যার স্বপন পাত্রের সঙ্গে একঘরে ছিলাম। মুখচোরা মৃদুভাষী স্বপন আজ বড় বিজ্ঞান-গবেষক। তো সেই জ্বালার শোধও নিয়েছিলাম বেশ ভালোভাবেই। তৃতীয় বর্ষে দাদাগিরির চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি আমার ঘরে দুটো তক্তাপোষ একসঙ্গে জুড়ে বেশ বহাল তবিয়তে গদিয়ান হয়েছিলাম। শেষে একদিন ইনচার্জ ধনেশদা এসে খুব রাবড়িমাখানো গলায় বললেন- বাবা রূপক! তুমি স্যারের ছেলে। তোমার একি ব্যবহার!! আমি ততোধিক বিনয়ের সঙ্গে বললাম-- কেন, কেন ধনেশদা? আমার অপরাধ কি? ধনেশদা বললেন - এই যে তুমি দুদুটো তক্তাপোষ একসঙ্গে নিয়ে রেখেছো, এটা কি ঠিক কাজ হয়েছে? এদিকে নতুন ছেলেরা মেঝেতে শুয়ে থাকছে। আমি বললাম- সে কি! নতুন ছেলেরা মেঝেতে শুচ্ছে!! কই আমি তো জানি না! ছি ছি। খুব বাজে কাজ হয়েছে। আগে বলবেন তো! চলুন চলুন, আমি নিয়ে গিয়ে দিয়ে আসছি নীচে। ধনেশদা বহুকাল ধরে অনেক বাঘা বাঘা আবাসিক পার করেছেন। মুচকি হেসে বললেন-থাক তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমি লোক পাঠাচ্ছি। তারাই নিয়ে যাবে। এই বলে ধনেশদা রাম রাম বলে ডাকতে ডাকতে চলে গেলেন।
তা আমার টেবিলে থাকতো একটা অ্যালার্ম ঘড়ি, কলমদান, জ্যামিতি বাক্স, কাগজচাপা, জলের জগ, ছাইদানী, বিড়ির তাড়া আর দেশলাই। আর থাকতো বেশকিছু ক্যাসেট। ঠাকুমার দেওয়া মুড়ির টিনটা আর একটা তালালাগানো সুটকেস থাকতো তক্তাপোষের তলায়। একটা আলনাও ছিলো ঘরে। তাতে জামাকাপড় থাকতো। একটা দড়ি টাঙানো ছিল টেবিলের উল্টোদিকের দেওয়ালে। তাতে গামছা, আজকের পরা জামা গেঞ্জি এসব ঝুলতো। আর একটা পেরেকে ঝুলতো ছোটো একটা আয়না আর চিরুনি। হ্যাঁ একটা কাপড়ের পাপোষও ছিল। তক্তাপোষের মাথার দিকে দুটো পেরেকে মশারিটা গোটানো অবস্তায় ঝুলতো। তক্তাপোষে ঢাকা দেওয়া বালিশ, পাশবালিশ আর একটা ছোটো শোয়ানো কালোরঙের সোনি টেপ। টেপটা আমার আমেরিকা-প্রবাসী মেজপিসি আমাকে দিয়েছিলো। খুব মিষ্টি আওয়াজ ছিলো টেপটার। টেপটাতে শুনতাম হেমন্ত, কিশোর, মুকেশ, লতা, মান্না আর রবীন্দ্রসঙ্গীত। আমার খুব পছন্দের শিল্পী হচ্ছেন মুকেশজী। আর লতাজীর দুঃখের গানগুলোর খুব ভক্ত আমি চিরকালই। আর শুনতাম তালাত মামুদের গজল। তবে শুতে যাওয়ার আগে আলো নিভিয়ে একটা সিগারেট বা বিড়ি ধরিয়ে রোজই শুনতাম, হেমন্তের কন্ঠে - দিনের শেষে / ঘুমের দেশে। এটা না শুনলে আমার ঘুমই আসতো না। ফিজিক্স আর অঙ্ক করার সময় এই টেপটা চালিয়ে দিয়ে পড়তাম। টেপটা আজও আছে আমার কাছে। তবে ক্যাসেট শোনা আর বিশেষ হয় না।
সে রাতেও আমার ঘরে ঢুকে জামাকাপড় ছেড়ে লুঙ্গি পরে দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি দিয়ে দিলাম। তারপর জানালাটা খুলে দিয়ে টেপটা চালিয়ে দিলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় আধশোওয়া হয়ে সুখটান দিতে লাগলাম। বেশ তন্ময় হয়ে গান শুনছি। সন্ধ্যের ওই ঘটনার রেশ তখন মন থেকে মুছে গ্যাছে। এমন সময় ঠক ঠক ঠক -- আওয়াজ কানে এলো। কে যেন সিঁড়ি বেয়ে লাঠি ঠুকে ঠুকে উঠছে। আমি একটু উৎকর্ণ হয়ে বিছানায় সোজা হয়ে বসলাম। ঘষটে ঘষটে চলা পায়ের আওয়াজ ক্রমশ আমার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। শেষে আওয়াজটা আমার ঘরের সামনে এসে থামলো।
৪ র্থ পর্ব
দরজার কাছে পায়ের আওয়াজ থেমে যেতে আমি বিছানায় উঠে বসেছি। ঠক ঠক করে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল। সেইসঙ্গে শুনতে পেলাম- বাবু, আইচেন নাকি? আমাদের হোস্টেলের কর্মী দোলুদা। সুধীরবাবু, তারিণীবাবু, রামবাবু -এরা সব বাড়ি চলে গ্যাছে। কেবল দোলুদাই যায়নি। আমি গলাসাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিলাম। দেখি একহাতে লাঠি আর অন্যহাতে একটা ঝুলপড়া হ্যারিকেন নিয়ে দোলুদা আমার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বললে- কখুন আলেন গো বাবু? আমি সুন্ধ্যে থেকে তিইনবার আইস্যে ফিরাই গেঁছি বটেক। আমি বললাম- এইতো একটু আগে এলাম। আজ বাজারে যা হল!! দোলুদাও শুনেছে ঘটনাটা। সে মাথা নাড়তে নাড়তে বললে -হঁ বাবু। আমি শুনইছি সব। তা আপনার কি ভয় লাইগছ্যে না কি বলেন কেনে। আমি বললাম - না, ভয় আর কি! দোলুদা সাহস দিয়ে বললে- ভয় লাইগল্যে আমাকে টুকু হাঁক দিবেন কেনে। আমি তো ওল্ড বিল্ডিং এ আছি বটে। সারারাত জাগ্যেই থাইকবো হ। এবার দোলুদার একটু বর্ণনা দিই। আমি তো এক লিকপিকে পাঁচ ফুটাইয়া। দোলুদা আমার চেয়েও বেঁটে। বুকের আর পাঁজরের হাড় বেরিয়ে রয়েছে। মাথার চুলগুলো কালো হলেও তখনই পঞ্চান্নর মতো বয়েস। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কানে ভীষণই কম শোনে। চোখের দৃষ্টিও সেই অনুপাতে কম। বড় একটা লাঠি ঠুকে ঠুকে এক পা এক পা করে হাঁটে। তা এ হেন দোলুদার কথা শুনে আমি যারপরনাই ভরসা পেয়ে বললাম- ঠিক আছে দোলুদা। আমার অসুবিধা হলে আমি আপনাকে ডাকবো। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। দোলুদা আমাকে অনেক সাহস দিয়ে চলে গ্যালো। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারোটা। আমি আর কিছুক্ষণ গান শুনে আর ধূমপান করে মশারি টাঙালাম। এবার টেপে- দিনের শেষে ঘুমের দেশে চালিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। খোলা জানালা দিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি!!!
ঘুমের মধ্যে কতদূর থেকে যেন মনে হল কি যেন একটা আওয়াজ হচ্ছে। ক্ষীণ কানে আসছে- ঠক ঠক ঠক ঠক---ঠক ঠক ঠক ঠক---ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক। এক ঝটকায় ঘুম ভেঙে গেলো। আমার দরজায় কে যেন কড়া ঠুকছে। যা ব্বাবা। আবার কে রে ভাই! সেই সঙ্গে ছাদে একটানা পায়চারীর আওয়াজ। কি হল ব্যাপারটা!! সদ্য কাঁচা ঘুম ভাঙায় মাথায় কিছু ঢুকছে না। চোর ডাকাত না কি! আমার কাছে বেশ কিছু টাকা আছে। নাকি ভুত! সন্ধ্যেবেলার ঘটনাটা মনে পড়ে যেতে নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত শিউরে উঠলো। ধড়মড় করে উঠে বসলাম বিছানায়। তারপর মনে হল - ভুত তো লোহা ছুঁতে পারে না! তাহলে! নাকি রাজনৈতিক আক্রমণ হল! বাইরে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার। গাছের পাতা নাড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ছাদে সেই একটানা পায়চারীর আওয়াজ হয়েই চলেছে। আর দরজার আওয়াজটাও বাড়ছে। আমার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো। যাই ঘটুক দরজা আমি খুলবো না। দরজা ভাঙলে রেনপাইপ বেয়ে নেমে যাবো নীচে। তারপর মার দৌড়। এই সিদ্ধান্তে আসতে মনে একটু বল পেলাম। ঝোলানো বেডসুইচ টিপে আলোটা জ্বাললাম। বললাম-কে? উত্তর এলো-উঠেছিস তুই? আমি তীর্থ।
নামটা শোনা মাত্র আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হাড়হিম করা স্রোত বয়ে গেলো। মাথার চুলগুলো আর গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। হৃৎপিণ্ডটা ধড়াস করে একটা বিরাট লাফ দিয়ে একবার থেমে গিয়ে পাঁচগুণ জোরে ছুটতে শুরু করলো। জিভটা শুকিয়ে গিয়ে কথা আটকে গেলো। সারা শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম বেরোতে লাগলো। মনে হল আমার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে। মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোলো না। ছাতের পায়চারীর আওয়াজটা যেন কয়েকগুণ জোরে কানে বাজতে লাগলো।
আবার আওয়াজ ভেসে এলো- আমি এই কলেজেই পড়তাম। এই হেস্টেলেই থাকতাম। রাত্রেবেলা বাঁকুড়ায় এসে হোস্টেলে ঢুকেছি। সবঘরের চাবি বন্ধ, কেবল তোর ঘরের চাবিই খোলা আছে দেখলাম। অত রাতে তোকে আর ডাকিনি। সারারাত ছাদে পায়চারী করেই কাটালাম। এখন ভোরে তোর সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
এসব শুনে আমার তো আরোই আত্মারাম খাঁচাছাড়া। আমি তীর্থদার কথা শুনেছিলাম। আমাদের কলেজেই সাম্মানিক ইংরাজি নিয়ে পড়তো। আমি কখনও চোখে দেখিনি তাকে। শুনেছিলাম যে ব্যর্থ প্রেমের কারণে তীর্থদা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে অনেকদিন আগেই। এখন সে কিনা আমার সঙ্গে কথা বলছে!! মাথার মধ্যে কিরকম যেন ঝিমঝিম করছে। বুক ফেটে যাবার জোগাড়। তারই মধ্যে রামনাম জপছি। মনে মনে আওড়াচ্ছি-- ভুত আমার পুত / পেত্নী আমার ঝি/ রামলক্ষ্মণ বুকে আছে / ভয়টি আমার কি!!! আবার ভালো করে মনে করার চেষ্টা করছি-- গলাটা কি নাকি নাকি শোনালো!! আবার ভাবছি - এখনোও আমার গলাটা টিপে ধরছে না কেন? কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে ছাদ থেকে এসে আমার সঙ্গে কথাই যদি বলছে তাহলে ছাদে পায়চারীর আওয়াজ হচ্ছে কিভাবে!! ভুতেরা শুনেছি একসঙ্গে নানা জায়গায় থাকতে পারে। জানালার দিকে দেখছি যে ওখান দিয়ে কোনো লম্বা হাত এসে ঢুকছে কি না। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখি প্রায় চারটে বাজে।
সেই গলা আবার জিজ্ঞেস করলে - তোর নাম কি? বললাম। মানে গলা দিয়ে একটা ফ্যাঁসফেঁসে আওয়াজ বেরোলো মাত্র। কি নাম বললি? জোরে বল। এবার একটু সাহস সঞ্চয় করে নামটা বললাম। কি পড়িস? বললাম- ফিজিক্স। কোন ইয়ার? তাও বললাম- সেকেন্ড ইয়ার। ও, তা তুই লক্ষ্মী পাণ্ডাকে জানিস তো? লক্ষ্মীদা ইংরাজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আমাদের ব্লকেই থাকে। আমরা প্রায়ই আড্ডা মারি। বললাম- হ্যাঁ। ও তো এখন বাড়ি গ্যাছে। ততক্ষণে আমার একটু সাহস বেড়েছে। এতোক্ষণ ষখন গলা টেপেনি তখন এযাত্রা বেঁচেই গেলাম মনে হচ্ছে। না কি বিড়ালের খেলিয়ে খেলিয়ে ইঁদুর মারার মতো সব জেনে নিয়ে তারপর আয়েশ করে গলাটায় আদর করবে!! রামনামের বেগ আরও বেড়ে গেলো। একটা জিনিস কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না যে ছাদে একটানা পায়চারী কে করছে!! বললে- আমি লক্ষ্মীর বাড়ি যাবো আজ একটু পরে। কিভাবে যেতে হয় রে? কোন বাস ধরতে হবে তা বললাম। এবারে কলেজের এর তার খবর জিজ্ঞেস করতে লাগলো। রাজনীতির কথা জিজ্ঞেস করলো। আমি যা জানি বললাম। প্রায় মিনিট পনেরো এভাবে কথা চলল আমাদের। ছাদের পায়চারীও একটানা চলতেই লাগলো। শেষে বললো- তুই আবার শুয়ে পড়। আমি ছাদে চললাম। একটু পরে লক্ষ্মীর বাড়ি যাবার বাস ধরবো। এই বলে সত্যি সত্যি পায়ের আওয়াজ চলে যেতে লাগলো ছাদে ওঠার সিঁড়ির দিকে। ছাদে পায়চারী কিন্তু একটানা চলছেই।
আমি খানিকক্ষণ বসে বসে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করলাম। কিছুই মাথায় ঢুকলো না। চিমটি কেটে দেখলাম যে স্বপ্ন দেখলাম, না কি সত্যি ঘটলো। ছাদে পায়চারী রহস্যেরও কোনো কুলকিনারা খুঁজে পেলাম না। তবে এটুকু বুঝলাম যে যেই হোক বা যাই হোক সে আমাকে মেরে ফেলবে না। তাহলে এতোক্ষণে আমার বেঁচে থাকার কথা নয়। আলো নিভিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছে না। বারবার জানালার দিকে চোখ চলে যেতে লাগলো। উঠে জানালাটা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম।
কখন জানি না একটু তন্দ্রা মতো লেগেছে চোখে। আবার দরজায় টোকার আওয়াজ। কি রে, ঘুমোলি নাকি? চটকা ভেঙে উত্তর দিলাম - না। হ্যাঁরে চিরন্তন পত্রিকা এখনও বেরোয়? তখন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দুটো পত্রিকা বের করতো। একটা প্রমিথিউস। আর একটা এই চিরন্তন। এবার আমার একটু বিরক্ত লাগলো। ভোরবেলা ঘুম থেকে তুলে এ কি রসিকতা! ছাদে কিন্তু পায়চারী হয়েই চলেছে। আমি বিরক্তি চেপে জবাব দিলাম - হ্যাঁ বেরোয়। কে সম্পাদক? বললাম- জহরদা। তখন আমি ওই পত্রিকার অনেক কাজই করতাম। বললো- আমরাও চিরন্তন বের করতাম। ওটা এখনও বেরোচ্ছে জেনে খুব ভালো লাগছে। আরও টুকটাক কিছু কথা হল। তারপর বলল- নে এবার ঘুমিয়ে পড়। আর জ্বালাবো না তোকে। এই বলে পায়ের শব্দ আবার ছাদের সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। আমিও এই ভুতুড়ে কথপোকথন ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো। দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে দেখি শরতের ঝকঝকে রোদে ভেসে যাচ্ছে আকাশ। ( শেষ )
৫ ম পর্ব
( যে কথাটুকু না বললেই আর চলছে না )
সকালে দাঁত মাজতে মাজতে দোলুদার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- দোলুদা কাল রাতে হোস্টেলে আর কেউ এসেছিলো না কি? দোলুূদা মাথা নেড়ে বললে- কই না তো বাবু। আমি তো কাউকে দেখি নাই। কেনে বটে? আমি বললাম- না, এমনিই। মাথার মধ্যে কাল রাতের ঘটনাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি ঘটলো ব্যাপারটা!!!
একটু পরে গেলাম কলেজ মোড়ের দাদুর দোকানে। এই দোকানে আমাদের অনেকেরই খাতা খোলা ছিলো। পয়সা পকেটে না থাকলেও চা চপ মিষ্টি খাওয়ার অসুবিধা ছিলো না। আমি টিফিন করে চা খেতে খেতে দাদু আর দীনেশদাকে বললাম ঘটনাটা। শুনে তো ওরা শিউরে উঠলো। তারপর শুরু হলো নানা গল্প। কে কবে কোথায় ভুতদেখার কথা শুনেছে সেসব আলোচনা চলতে লাগলো। দুু-একজন খদ্দেরও এই আলোচনায় যোগ দিলো। দাদু ও দীনেশদা দুজনেই আমাকে বললে- তুমি আর ওখানে থেকো না। বাড়ি চলে যাও। হোস্টেল খুললে তবে আসবে। কি থেকে কি হয় তা কি কেউ বলতে পারে!
এই মোড়ে ফার্মে ঢোকার রাস্তার পাশে তখন ছিলো স্বপনদার পান-সিগারেটের গুমটি। দারুণ ভালো মিঠাপাতা পান সাজতো স্বপনদা। আমরা চা খাবার পর তো বটেই, যখনতখন স্বপনদার পান খেতাম। একটা পানপাতাকে কেটে দুটো পান বানাতো স্বপনদা। চূন, খয়ের, জিরেজিরে করে কাটা ভাজা সুপুরি, ছোটো এলাচ আর রঙবেরঙের গুঁড়ো মিঠা। একটা পান পঞ্চাশ পয়সা। দুটো করে পান একসাথে মুখে পুরতাম। আর সিগারেট। এখানেও আমাদের খাতা ছিলো। তখন আমি খেতাম ক্যাপস্টেন কিং সাইজ বা প্লেন চারমিনার সিগারেট। মাঝেসাঝে বাদশাহি মেজাজে ফিল্টার উইলস। ধোঁয়া টেনে রিঙ ছাড়তে পারতাম খুব। তো দীনেশদার দোকানে চা খেয়ে এখানে এসে পান সিগারেট খাচ্ছি। স্বপনদাকে বললাম ব্যাপারটা। স্বপনদাও শিউরে উঠলো। নানারকম কথা বলতে লাগলো। আসল ঘটনা কিছু বোঝা গেলো না। স্বপনদাও বললে- ওটা ভুতই এসেছিলো। নইলে তোমার সঙ্গে দরজায় কথা বলছে আর ছাদে পায়চারী করছে-এটা কি করে হয়!! তুমি বাড়ি চলে যাও। নয়তো তোমাদের স্কুলডাঙার বাড়িতে গিয়ে থাকো। বলা তো যায় না। কি থেকে কি হয়।
কিছুক্ষণ পরে জহরদা এলো। আরও দু-একজন আড্ডাধারী এসে জুটেছে। অসীম নন্দীদাও এসে পড়লো। আমি বললাম ঘটনাটা। জহরদাকে বললাম - তুমি চিনতে তীর্থদাকে? জহরদা নিজেও ইংরাজি অনার্সের ছাত্র। তার উপর অধ্যক্ষের ছেলে। ভীষণ জনপ্রিয়। বহু লোকের সঙ্গে জহরদার আলাপ। জহরদা বললো-হ্যাঁ, তীর্থকে আমি চিনি। সে তো অনেক আগেই কলেজ ছেড়ে দিয়েছে। আমিও শুনেছি যে তীর্থদা আত্মহত্যা করেছে। আরও দু-একজনও বললো যে তারাও তাই জানে। সবাই বিশ্বাস - অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে। শেষে রাগটা গিয়ে পড়লো আমার উপর। -তোকে কে এইসময় হোস্টেলে থাকতে বলেছে? বাড়ি চলে যা। আজ দুপুরেই বাস ধর। কিছু একটা হয়ে গেলে তখন কি হবে? আমি বললাম- আমি নবমী কাটিয়ে দশমীর দিন যাবো। বললাম বটে, কিন্তু রাতের কথা মনে করে বুকটা হিম হয়ে গেলো। পায়ের জোর কমে গেলো। সবাই বারবার আমাকে ধমকাতে লাগলো। শেষে সিদ্ধান্ত হলো যে আজ রাতে অসীমদা আমার সঙ্গে থাকবে। আর কাল সকালেই আমাকে বাসে তুলে দেবে।
যতদূর মনে পড়ছে সেদিন দুপুর ও রাতের খাওয়াটা অসীমদার বাড়িতেই হয়েছিলো। রাতে অসীমদা আমার সঙ্গে হোস্টেলে থেকে সকালে তারকেশ্বরের বাসে চাপিয়ে তবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলো।
ভাইফোঁটার পর হোস্টেল খুলতে লক্ষ্মীদাকে চেপে ধরলাম। -গুরু বলোতো কেসটা কি? লক্ষ্মীদা বললো- কিসের কেস? বললাম- তীর্থদা কি আত্মহত্যা করেছে? লক্ষ্মীদা হো হো করে হেসে বললে-তোর সঙ্গে কথা বলে গ্যাছে তো! বললাম - হ্যাঁ। বললো আমি লক্ষ্মীর বাড়ি যাবো। লক্ষ্মীদা বললো- হ্যাঁ, গিয়েছিলো তো। - তার মানে??? তীর্থ আত্মহত্যা করে নি?? লক্ষ্মীদা বললো- আরে না না। ও একজনকে ভালোবাসতো। তার সঙ্গে কেটে যায়। আর তার পরপরই তীর্থ কলেজ ছেড়ে চলে যায়। তখন গুজব রটে যে ও আত্মহত্যা করেছে। আমি হাঁ করে মিনিটখানেক লক্ষ্মীদার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। - যাঃ শালা। এই কেস। তারপরই বললাম- ছাদে পায়চারী করছিলো কে? লক্ষ্মীদা হাসতে হাসতে বললো- ওরা দুবন্ধু অনেকরাতে ট্রেনে বাঁকুড়ায় নেমে হোস্টেলে ঢোকে। সবঘর তালামারা দেখে ওরা ছাদে গিয়ে সারারাত ওখানেই মশার জ্বালায় পায়চারী করে কাটায়। একমাত্র তোর ঘরেই তালা ছিলো না, সেটা ওদের নজরে পড়ে। অত রাতে তোকে আর ডাকে নি। ভোরবেলা তীর্থ তোর সঙ্গে কথা বলেছে এসে। আর ওর বন্ধু ছাদে পায়চারী করেছিলো। তুই ভয় পেয়ে দরজা খুলিস নি সেটাও আমাকে বলেছে। এবার বুঝলি বোকা।
বুঝলাম মানে হাড়ে হাড়ে বুঝলাম। প্রচণ্ড রাগ হোলো। ঝাঁঝিয়ে বললাম- কেতাত্থ করেছে আমায়। আচ্ছা বাজে ছেলে তো! এদিকে আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম। এভাবে কেউ করে।
লক্ষ্মীদা হাসতে হাসতে বললো- তুই একটা গাধা।
আমি বললাম-তা বটে।।। (সমাপ্ত)
লক্ষ্মীদা হাসতে হাসতে বললো- তুই একটা গাধা।
আমি বললাম-তা বটে।।। (সমাপ্ত)
-----
আশাকরি এবার সবাই বিশ্বাস করবেন যে আমার সে রাত্রির ভয়টা কোনো কল্পনা ছিলো না।
No comments:
Post a Comment