Monday, July 25, 2016

কলেজ ট‍্যাঙ্ক : শ্যামলী দাস

নাঃ, আর থাকা গেলো না...কলেজ গ্রুপের মেম্বারগন, বর্তমানে 'স্মৃতিকথন' নামক ইনফ্লুয়েঞ্জা তে আক্রান্ত। এবংএটা এতই মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ, যে নিজেকে আর বাঁচানো গেলোনা কিছুতেই.... অতএব, জ্বর গায়ে স্মৃতির চোরা গলিতে প্রবেশ করতেই হলো।এতোদিন দাদা এবং দিদিরা যেভাবে সব সাংঘাতিক ঝোড়ো ইনিংস্ খেলেছেন এবং ছয়- চার -এ কলেজ মাঠ ভরিয়ে দিচ্ছেন, আমার অবস্থা এখন টিপিক্যাল বোলারদের কাঁপা হাতে ব্যাট ধরার মতো।লিখতে বসে শুধু হাত নয়, আ‍্যনড্রয়েড মুঠি ফোন টি ও যেন কেঁপে উঠছে...but the show must go on......
.......1991, xi - science.....সেই ফ্যান্টাসির জগতে প্রবেশ করার দিনটায়, মনে হয়েছিলো...just উড়ছি.....ডানা দুটোই যা ছিলো না...প্রথম দু এক দিনের মধ্যেই এক দুর্ঘটনা.... সুন্দরী, লাজুক বান্ধবী বিচ্ছিরিরকম প্যাক্ খেয়ে " back to the pavilion".। বান্ধবীর(স্কুল জীবনের প্রথম শ্রেনী থেকেই সে আৃমার সঙ্গ ছাড়েনি) অশ্রুসিক্ত চোখ সহ্য করা গেলো না। "স্বভাব লিডার" এহেন আমি, রণং দেহী বলে ঝাপিয়ে পড়লাম, জন্মগত প্রতিবাদী চরিত্র জেগে উঠলো।প্রথমেই গুটিকয়েক বীরপুঙ্গব দের মধ্যে থেকে আসল কালপ্রিট্ কে সনাক্ত করা হলো এবং সাক্ষপ্রমান দ্বারা ভেরিফাই ও হলো। ঐ বীরপুরুষ টির কোনোরকম ব্যাকগ্রাউন্ড ও সিনিয়ারিটির কথা মাথায় না রেখেই, সরাসরি আক্রমন করলাম। বললাম- " ফের যদি এসব কথা শুনি, তুলে কলেজ ট্যাঙ্কে ফেলে দেবো".......
(হয়তো চলবে)
কলেজ ট‍্যাঙ্ক--২###
বান্ধবীর মূল্যবান অশ্রুবারি র প্রতিশোধসরূপ, শত্রু শিবিরে ঐরকম একখানা"মৌখিক বোমা" নিক্ষেপ করে, সটান পশ্চাৎ অপসরণ। বীরপুঙ্গব টি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঐ স্থানেই দাড়িয়ে রইল। সেই মুহুর্তে কোনোরকম প্রত্যুত্তর এলো না( একাদশ শ্রেনীর বালিকার কাছে, সে বোধকরি এমন হুমকিবার্তা আশা করে নি)। মনে মনে ভারি আনন্দ অনুভূত হল, " কি যুদ্ধটাই না জয় করে এসেছি!"। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বাঁশ কেন তুই ঝাড়ে???....সমস্যা এখানেই শুরু..। একে পুরুষ সিংহ,তার উপর সিনিয়ার, তাকে কিনা এমন হুমকি! তা আবার একটি " সদ্য স্কুলের গন্ধ মাখা" বালিকার কাছে!!!"...... পরের দিন কলেজ ছুটির পর, সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরবো, দেখি সেই পুঙ্গব টি পথিমধ্যে প্রায় পথ রোধ করে দাড়িয়ে আছে। ডেকে বলল " কই .... কলেজ ট‍্যাঙ্কে ফেলো দেখি! আমি রেডি"। এতো সমুহ বিপদ!!!! হৃদস্পন্দন স্বকর্নে যেন শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু "ভাঙ্গিব তবু মচকাইবো না"। গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলাম-- " ট‍্যাঙ্কের জল মাপা হচ্ছে, এই ভর গ্রীষ্মে জল কম, শুধু ফেললে তো হবে না-- ডোবাতে হবে তো! "---- এই কথা বলেই সাততাড়াতাড়ি সাইকেলে চেপে চম্পট দিলাম। কিন্তু ভবি ভুলিবার নয়....আমার এহেন হুমকি ঐ অগ্রজ বালক টি কিছুতেই হজম করতে পারলো না। ইতিমধ্যে একজন সহপাঠী বন্ধু খবর দিলো--- সেই" বীরপুরুষ "টি নাকি ভালো সাঁতারু এবং 'ক্যারাটে' নামক মার্শাল আর্ট টি তেও পারদর্শী ( হলুদ অথবা কালো বেল্ট প্রাপ্ত)। ....... হয়ে গেলো!!!!! কেলো করেছে!!!!!!
(ফিরে আসছি)
কলেজ ট‍্যাঙ্ক --শেষ পর্ব#####
ইতিমধ্যে xi- science এর ১০৫ টি নবীন কিশোর - কিশোরী দের মধ্যে থেকে, যে নমুনা গুলি সবচেয়ে পাজি, বিচ্ছু এবং ফাঁকিবাজ-- তাদের কে ঠিকঠাক আইডেন্টিফাই করে, বেশ একটা শক্তিশালি বন্ধু প্রবরের দল গঠন করা হয়ে গেছে। সেই দলে , বাঁকুড়া জেলা স্কুলের পাঁচিল টপকানো , ক্যান্টিনের বেন্চ বাজানো, গেছো বালকের সংখা ই ছিলো বেশি, আমার মতো আরো গুটি কয়েক বালিকা ও ছিলো।
..... সেদিনের ঐরকম একখানা বাক্যবাণ ছুঁড়ে আসার পরের দিনই পুনরায় সেই সাঁতারু পুঙ্গব টির সাথে মোলাকাত। আমার এমন ভাব, যেন " চোখেও দেখিনা, কানেও শুনিনা"। আওয়াজ এলো..." ট‍্যাঙ্কের জল মাপা হল???...." ---এতো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেলো!!! নাঃ কিছু একটা না করলেই নয়... মনে মনে ভাবলাম... " শত্রুপক্ষ শক্তিশালী, একে সাঁতারু তায় মার্শাল আর্ট! একা লড়াই করাটা বোকামি!".... অতএব সেনাবাহিনী র প্রয়োজন। অগত্যা উপরিউক্ত গেছো বন্ধুপ্রবরের দলে গিয়ে ঘটনার details বর্নিত হলো।তারা তো শুনেই লাফিয়ে উঠল!! প্রিয় বান্ধবীর এহেন সৎ লড়াই এ তারা মহারথী হতে এক পায়ে রাজি। ব্যাস কেল্লা ফতে! আমাকে আর পায় কে? নিজেকে মহারাণী লক্ষীবাই এর মত মনে হল.... ' লড়েঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' ---সেনাবাহিনী প্রস্তুত।......পরের দিন, চার মহারথী তৈরী। যুদ্ধের পরিকল্পনা অনুযায়ী , আওয়াজের অপেক্ষা... যেই আওয়াজ এলো, শত্রুপক্ষের অবস্থান দেখিয়ে দিলাম। ব্যাস, বাহিনী আক্রমনের জন্য এগিয়ে গেলো। প্ল্যান মোতাবিক আমার প্রথমেই আক্রমনে নামা বারন ছিলো, signal পেলেই রনক্ষেত্রে আমার প্রবেশ হবে। তাই খানিক টা দূর থেকে নজর রাখছিলাম। বেশ কিছুক্ষন পেরিয়ে যাবার পর, একজন মহারথী খবর নিয়ে এলো- শত্রুপক্ষ "সন্ধি "চায়। হঠাৎ সন্ধি কেন???? আমার প্রেরিত মহারথী দের মধ্যে নাকি একজনের'"সে" পূর্বপরিচিত,এবং আমার দলবাজীর খবর "সে" ইতিমধ্যেই পেয়েছে(অাসলে পুঙ্গবটি, মনে মনে ভয় পেয়েছিলো হয়তো)। সেই বীরপুঙ্গব টি surrender করেছে, এবং শাস্তি সরূপ সবাই কে সে মোগলাই খাওয়াবো বলেছে। এখন আমি যদি রাজি থাকি। দেখলাম, সবাই মোগলাই খাওয়ার আনন্দে প্যাঁকাসূরের অপরাধ দমনের কথা ভুলেই গেছে!!!! (বালক গন চিরকাল ই হ্যাংলা হয়)।অগত্যা... পাবলিক ডিমান্ড!!!! সে যাত্রায় প্যাঁকাসূর বধ আর হলো না...মায়ার প্রান... ক্ষ্মমা করে দিলাম। জনগনের ঐকান্তিক ইচ্ছায় প্যাঁকাসূর রক্ষা পেলো। আমাদের প্রিয় কলেজ ট‍্যাঙ্ক ও প্যাঁকাসূর বধের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেলো। কিন্তু ঐ মোগলাই ভোজনের দিনে আমি অনুপস্থিত রইলাম। প্যাঁকাসূরের খাওয়ানো মোগলাই হয়তো আমার হজম হতো না.......
( জনগনের কৌতুহল নিরসনের জন্য, এইটুকু আশ্বাসবানী দিতে পারি-- এই প্যাঁকাসূরের সাথে ব্রাউনিয়ানরা কোনোভাবেই জড়িত ছিলো না...)

No comments:

Post a Comment