Thursday, July 21, 2016

কলেজ স্মৃতি : মৃত্তিকা মুখার্জী চট্টোপাধ্যায়

~~~~~১~~~~~
আমার Christian College এ ভর্তি হবার পর্বটি ছিল রহস্য ও অনিশ্চয়তায় মোড়া।1997 এর শেষদিকে আমি writers' cramp নামক এক অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত হই। এর ফলে ডান হাতে লিখতে পারতাম না।নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষে চিকিৎসক জানালেন,যেহেতু আমার কোন স্নায়ুবৈকল্য ধরা পড়েনি,আমার লেখার ক্ষমতা নিজেই ফিরে আসবে।সব কাজ করতে পারি ডান হাতে,শুধু লিখতে পারিনা।যাক্,তো এই টানটান উত্তেজনা ও challenge এর মুখোমুখি হয়ে আমি বাঁ হাতে লিখে 1998 এ higher secondery পাশ করি এবং Christian College এ ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়তে ভর্তি হই।
প্রথম co-education college.এর আগে school এবং eleven,twelve ছিল একান্তভাবে মহিলাদের ।একেই college বললে মনের আকাশে কয়েকশো রঙীন ফানুস উড়তে থাকে।"দেখা,না দেখায় মেশা" সে এক মায়াপুরী।ঐ প্রকান্ড মাঠ,সারি সারি সাইকেল আর রঙবেরঙের রকমারি জামাকাপড় পরিহিত ছেলেমেয়েদের দিকে এতদিন জুলজুল করে দূর থেকে তাকিয়ে থেকেছি।এবার আমিও তার একটা অংশ হতে চলেছি।বিশ্বাসই হয়না যেন!!"না জানি সেথা কত সুখ মিলিবে"!!তারপর আমার মতো কঠোর শাসনে আঁটা জীবন যার!!কাজেই আমার রোমাঞ্চের কারণ তারাই বুঝবে,যারা জানে রাস্তার আলো জ্বলার আগে বাড়ি ঢুকতে হয় এবং মা office থেকে বাড়ি ঢোকার সময় যেন রেওয়াজ টা মায়ের কানে যায়।সব মিলিয়ে Christian College নিয়ে আবেগ ও উত্তেজনা ছিল কানায় কানায়।

~~~~২~~~~
অতঃপর শিহরিত,রোমাঞ্চিত ও কিঞ্চিত পুলকিত আমি ক্ষুদ্র কপোতীর ন্যায় লম্ফমান হৃদয়টিকে একরকম বগলদাবা করেই class এ গিয়ে উপস্থিত হলাম।"এ কি পুলকবেদনা জাগিছে মধুবায়ে"।প্রথমে কয়েকটা চেনা মুখ।তার মধ্যে কিছু ছেলেকেও যেন দেখেছি ,দেখেছি।
তবে কয়েকজন মেয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকে।তারা সব চলনে বলনে অতি আধুনিকা এবং রীতিমতো convent থেকে পাশ করা।আমার মতো Bengali medium,সালোয়ার কামিজের সাথে কি তারা ভাব করবে?দেখা যাক্।
দু,চারদিন যেতে না যেতেই একটি ছেলের কিছু অপ্রীতিকর আচরণে ধানবাদথেকে আসা একটি মেয়ে কিছু অস্বস্তির শিকার হয় এবং আমাদের কয়েকজনের মধ্যস্হতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ।এর ফলস্বরূপ ওই বাইরে থেকে আসা মেয়েদের group টির সাথে আমাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে।পরে ladies' hostel এর দোতলার ঘরে তাদের সাথে সুখ দুঃখের গল্প করে অনেক দুপুর আমি কাটিয়েছি।
তা যাই হোক্,প্রথম দিকের কোন একটা class এ professor এসে blackboard এ বড় বড় করে লিখলেন 'She sells sea shells on the sea shore' এবং বাক্যটি এক এক করে সবাইকে জোরে জোরে পড়তে বললেন।যে ক'জন professor এর মন ভেজাতে পারলো,তার মধ্যে আমি একজন।যাক্,কিছু তো একটা করে দেখালাম।পড়াশুনোয় আজন্ম ফাঁকিবাজ আমি নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম মনে মনে।এর পুরস্কার স্বরূপ আমাকে একবার একটি script পড়ার জন্য মনোনীত করা হয়।
নিয়তির এক নিষ্ঠুর পরিহাসে আমার school এবং college জীবন বাড়ির বাইরেও ছিল অভিভাবকময়।যেদিকে তাকাই অমুক মামা,তমুক মাসি।এবং ভাগ্যের গূঢ় অভিসন্ধিতে আমার schoolও college গুলিও ছিল এইসব মামা,মাসিতে পূর্ণ ।এ অভিজ্ঞতা হয়তো আজীবন বাঁকুড়ায় বেড়ে ওঠা অনেক ছেলেমেয়েরই আছে।কিন্তু তাঁরা যে যথার্থই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী,সেটা আমার সেদিনের আঠেরো বছরি মন বুঝতে চাইতনা।ফলে পড়া না পারলেও মা,বাবা জেনে যেত অবধারিত।এরকমই একদিন class এ এক sir পড়াচ্ছেন।হঠাৎ কি একটা কারণে আমি আর আমার এক সহপাঠিনী হেসে ফেল্লাম।প্রথমে sir কিছু না বল্লেও যখন একটানা 5/7mnt আমি হেসেই চলেছি,তখন sir আমাদের উঠে দাঁড়াতে বললেন।এবং আমায় ডাকনামে ডেকে যথেচ্ছ বকাবকি করলেন।class থেকে বের করে দিয়েছিলেন কি,না সেটা সত্যিই আর মনে নেই।অতএব আমার জননীর রক্ত চক্ষুদ্বয় আমি মনশ্চক্ষে দেখতে পেলাম এবং ঝড়ের আশংকায় প্রমাদ গুণলাম।
*****৩*****
সে যাত্রা আমি আমার মাতৃদেবীর রোষ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলাম।হয়তো প্রথমবারের ভুল বলে।আসলে সেই শিশুকালে একবার গণিতশাস্ত্রে 'উর্বর'মস্তিষ্ক আমি গরুর দাম থেকে ছাগলের দাম বাদ দিতে গিয়ে আমার জন্মদাত্রীর হাতে প্রভূত পরিমাণ লাঞ্ছিত এবং ভর্ৎসৃত হয়েছিলাম।সেই থেকে যে কোন 'গর্হিত' কাজ করার আগে আমার শৈশবের সেই স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে signal পাঠাতো।college এ ঢুকে যৌবনের অতি উচ্ছ্বাসে সেই signal প্রথমবার tower miss করেছিল।তবে এ যাত্রা নিয়তিদেবী আমাকে দয়া করেছিলেন,সে কথা বলাই বাহুল্য।
যাক্ সে কথা।তো,এই সময় আমার কিছু কিছু লেখা,মানে কবিতা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো "প্রাত্যহিকী" নামক আকাশবাণীর একটি অনুষ্ঠান।এখানে এই প্রসঙ্গ উজিয়ে টেনে আনার কারণ যে আত্মপ্রচার নয়,সেকথা আপনারা এক্ষুনি বুঝতে পারবেন।প্রতি পনেরো দিনে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কিছু লিখতে বলা হতো।সেই সময় আমি প্রত্যহিকীতে নিয়মিত লিখতাম।সেই লেখা শুনে সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসত শুভেচ্ছাবার্তা।সেইসব চিঠি আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি ।সেইসব চিঠি আসতো Christian College এর ঠিকানায়।ফলে,একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আমি college এ ঢুকতে ঢুকতেই ধর্ম দা(college এর staff) এগিয়ে এসে আমার হাতে একগোছা চিঠি ধরিয়ে দিত।কি না থাকতো সেই চিঠিতে!!!পত্রিকার সম্পাদকের চিঠি,বাংলাভাষায় নাতনীকে অনুরক্ত করতে চাওয়া দাদুর চিঠি ,মায় প্রেমপত্র অব্দি ।আমি বেশ কয়েক বছর যাবৎ প্রত্যহিকীতে লিখেছিলাম।ফলে আমার college জীবনের সঙ্গে এই পর্বটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।ধর্ম দা একদিন অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে জিগেস করেছিল "কিসের এতো চিঠি আসে তোমার?কোথা থেকে আসে?" তা যে যাই ভাবুক,আমার প্রথম যৌবনকে এই চিঠির সম্ভার celebrity র গৌরব দান করেছিল।আমার দশ বছরের ফাজিল ছেলেটি এখন সেগুলোকে 'fan letter' আখ্যা দিয়ে যত্রতত্র আমায় পর্যুদস্ত করে মজা দেখে।এই সময় আমায় নিয়মিত চিঠি লিখতেন মণিভূষণ বা মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়( এই মুহুর্তে সঠিক নামটা দেখে নেবার উপায় নেই)নামে আশি,/বিরাশী বছরের এক ভদ্রলোক,যিনি রবীন্দ্রনাথকে ছোটবেলায় খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।উনি আমায় চিঠিতে 'ক্ষিতি' নতুবা 'ভূমি' বলে সম্বোধন করতেন।এ যে আমার কত বড়ো পাওয়া,সে আমিই জানি।আর এসবের জন্য আমার বন্ধুরাও আমায় ভালোবাসতো খুব।সেইসব শুভেচ্ছাবার্তা তারাও পড়তো।কখনো বন্ধুত্বের খাতিরে কষ্ট করে সকালে উঠে প্রাত্যহিকী শুনলে college এ এসে সে কথাও জানাতো।এতে আমার মনে যে বেশ আনন্দের সঞ্চার হতো,সে কথা আর গোপন করি কেন? প্রাত্যহিকীতে পঠিত কিছু কিছু চিঠি নিয়ে প্রাত্যহিকী নামেই একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো।একবার রবীন্দ্র সদনের জীবনানন্দ সভাঘরে ওনাদের একটি অনুষ্ঠানেও আমি গেছিলাম।আমার college এর দিনগুলোর সঙ্গে এইসব স্মৃতি ভীষণভাবে জড়িয়ে আছে ।কোন কোন sir এটা জানতেন।তাঁরাও উৎসাহ দিতেন।পড়াশুনোয় ছিলাম ফাঁকিবাজ।কিন্তু এইসব কারণে আর ছোটবেলা থেকে গানবাজনার কারণে school,college এ অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।এটা স্বীকার করতেই হবে।
######৪######
গান আমি কেমন গাই,সেকথা বলতে পারবোনা।সেটা বিচার করা আমার কাজও নয়। সেই সাত বছর বয়সে বাবার harmonium এ আমার গান শেখার শুরু ।আর এই ৩৬ বছর বয়স অব্দি গানের প্রতি আমার সেই ভালোবাসায় কোন ছেদ পড়েনি।গান থেকে কি পেয়েছি,গানকে আমিই বা কি দিয়েছি জানিনা।তবে শোকে,প্রাপ্তিতে,অন্ধকারে,আলোকবৃত্তের মাঝে আমি যেমন তাকে কাছ-ছাড়া করিনি,সেও তেমনি পরম বন্ধুর মতো কখনো আমায় দূরে সরিয়ে দেয়নি।ছোট থেকে নানাজনের কাছে শেখার পর college এ পড়ার সময় তৎকালীন District Magistrate জয়দেব দাশগুপ্ত(ইনি বিখ্যাত সাধন গুপ্তের জামাই) র bunglow এ আমার গান শোনেন রণো গুহঠাকুরতা এবং ভীষ্ম গুহঠাকুরতা।ওনারা আমাকে "দক্ষিণী" তে ভর্তি হতে বলেন এবং আমার সামনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
first year এর class শুরু হবার কিছুদিন পর একদিন দেখি,আমাদের English Honours এর class এর বাইরে তখনকার Principal Richard Rabindranath Bajpayee দাঁড়িয়ে আছেন।তখন class শেষ হতে আর ৫মিনিট বাকী।Professor Principal কে দেখতে পাচ্ছেন না।class শেষ হতেই Principal এসে বললেন "মৃত্তিকা কে আছো?" এই কথা শুনে আমার পিলে চমকে উঠে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় আর কি!!!তৎক্ষণাৎ আমার মস্তিষ্ক signal দিলো.....তবে কি আবার???কিন্তু তেমন কিছু তো মনে পড়ছেনা।যাই হোক্,ভেতর ভেতর ভয়ে শুকিয়ে গিয়েও কোনরকমে পিলে টিলে সামলে বাইরে এলাম।কোনক্রমে আজন্ম ভীতু আমি নিজেকে sir এর সামনে হাজির কল্লুম।খুবই আশঙ্কিত আমি কি হয়,কি হয় ভেবে কাঁপতে কাঁপতে এসেছি।লেখাপড়া ফাঁকি মেরে চালাই ঠিকই তবে কোন professor এর অবাধ্যতা তো করিনি।এর মধ্যেই আমাকে গুমোট দিনে বৃষ্টির স্বস্তি দিলেন sir নিজেই।কথাটা হলো সে বছর social এ "তাসের দেশ"হবে।তাতে বিশেষ বিশেষ গানের জন্যে sir নাকি আমার কথা ভেবেছেন।আমার তখন "হরি হে মাধব" অবস্হা।চুপচাপ ঘাড় নেড়ে rehearsal এ পৌঁছে যাব-এটুকু sir কে জানালাম।উনি কার কাছে আমার গানের কথা জেনেছিলেন,সেটা আর জানা হলোনা।যাক্ গে যাক্,sir,madam দের আমি বরাবরই একটু এড়িয়ে চলি।কিসের থেকে আবার লেখাপড়ার কথা এসে যায় আর বিদ্যাদেবী আমার কন্ঠনিসৃত হয়ে আমায় হাস্যাস্পদ করেন।তার চেয়ে এই ভালো।তো একথা বাড়িতে আমার মাতাশ্রী এবং পিতাশ্রী কে জানানোর সময় আমি অত্যন্ত শ্লাঘা বোধ করলাম।এতদিন শুধু "অঙ্ক পারেনা,ইতিহাসে পাশ কাটিয়ে যায়,ভূগোলে কোন idea নেই"-এসবই শুনেছো।হুঁ হুঁ বাবা....দেখো,দেখো ইত্যাদি,প্রভৃতি যখন ভাবছি,বাবা বললো রাত হবে নাকি রোজ rehearsal থেকে ফিরতে?আমি office থেকে ফিরে রোজ নিয়ে আসবো Principal এর bunglow থেকে।সেই শুরু হলো "তাসের দেশ"এর rehearsal sir এর bunglow তে।খুব আনন্দে কেটেছিল কয়েকদিন।জমিয়ে সারা সন্ধ্যে reheasal আর তারপর দল বেঁধে একসাথে বাড়ি ফেরা।এই সময়কার একটা অপ্রীতিকর ঘটনা বাদ দিলে খুব আনন্দে কেটেছিল সময়টা।
যথাসময়ে programme হলো।অনেকগুলো গান গেয়েছিলাম।কয়েকটা আবার আমাদের English Dept.এর এক sir এর সাথে duet.এরকম মজা হতো স্বরস্বতী পূজোয়।সারা সকাল পূজোর টুকটাক কাজ করে,গল্প করে বাড়ি যাওয়া।সন্ধেবেলা এসে আরতির পরে অনুষ্ঠান ।আমার বাড়ি কাছেই ছিল।বন্ধুরাও যেত।খুব আনন্দেই নদীর মতো বয়ে গেছে সেই দিনগুলো।
~~~~~~~~৫~~~~~~~~
শরৎ মেঘের মতো হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে গেছে সেসব দিন।কত ছোট্ট ছোট্ট পাওয়াও ছিল অমূল্য আবার কত অনায়াসে কত অপ্রাপ্তিকেও মেনে নিতে পারতাম।মেঘে,রোদে পারম্পর্য ছিল অসাধারণ।প্রবল উৎকন্ঠা আর মানসিক চাপে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম।তারপর college এর সোনার জরিতে মোড়ানো দিনগুলো এলো।Honours এর part 1 পরীক্ষাও আমি বাঁ হাতে লিখে দিয়েছিলাম।এই সময় college এরই এক professor এর কাছে private tuition নিতাম।সেই sir একদিন কথায় কথায় বললেন আমি part 1এ 50% ও নাকি পাবোনা এবং part 2তে অবধারিতভাবে result খারাপ হবে।আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম কারণ আমি first class পাবোনা জানতাম।কিন্তু 50%ও পাবোনা??অনেক tension নিয়ে পরীক্ষা দিলাম।যথাসময়ে result বেরোলো।56%.আমার বাবা,মা কে খুব বেশীবার সন্তানের জন্যে গর্ব করতে দেখিনি।যে দু একবার দেখেছি ,এটা তার মধ্যে একটা।আমার মা result বেরোনোর পরে তাঁর বাড়ি গিয়ে এক হাঁড়ি রসগোল্লা দিয়ে এসেছিল ।ওই professor এর প্রিয় student রা এখন নানা school,college এ পড়ায়।তিনি honours পরীক্ষার final এ ওইসব student দের কি বলেছিলেন ,সে কথাও ওই ছেলে মেয়েদেরই একজন আমাকে বলেছিল।তার সততাকে সম্মান জানাতেই হয়।তবে আমার জেদও সাংঘাতিক ।হিংসা বা রাগ-কোনটাই আমার স্বভাবজাত নয়।তবে অন্যায় আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা।
যাক্।এসব ছোট ছোট কথা ভুলে যাওয়াই ভালো।কখনো কাউকে বলিনি।আজ প্রথম পুরনো কথা লিখতে বসে মনটা আবেগাচ্ছন্ন হয়ে এলো।জীবন অনেক শেখায়,অনেক দেখায়।শুধু ভালো দিয়ে তো জীবন নয়।আলো,অন্ধকার দুটোই দেখে রাখা ভালো।তাতেই পূর্ণতা আসে,উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাওয়া যায়।বাবা বলে সংসারে তুচ্ছ ঘটনা মনে রাখতে নেই,মন উঁচু রাখতে হয়।দাঁড়িপাল্লায় মাপলে জীবনে পাওয়ার অঙ্কটাই জ্বলজ্বল করে।যেটুকু অন্ধকার,অনেক সস্নেহ হাসি সেটাকে ধুয়ে মুছে দিয়েছে।
আর একটু বলার আছে।

#######৬#######
অনেক ভালোবাসা,স্নেহ পেয়েছি আমি,একথা স্বীকার করতেই হবে।তবে প্রথাগত "প্রেম" যাকে বলে তা আর ইহজীবনে আমার হলোনা।হবে কি করে?দোষ কি আমার একটা?প্রথমত আমার গর্ভধারিণীর রক্তচক্ষু স্মরণ করে আমার মস্তিষ্কের সেই signal আর তারপর আমার গোঁয়ার স্বভাব।যেদিক থেকে,যেমন ভাবেই প্রেম আসুক না কেন,আমার plan pre-fixed.সে হয়তো খুবই আবেগতাড়িত হয়ে মনের কথা বলতে এসেছে ,আমার উত্তর তো ready.তাই প্রেম একাধিক বার তার রঙীন পক্ষপুটের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আমায় নিয়ে কল্পলোকে উড়ে যেতে চাইলেও আমিই ডানায় উড়ান ভরতে পারিনি।সত্যি বলতে কি যার জন্য 'সমাজ সংসার মিছে সব' বলে ভেসে পড়া যায়,তেমন করে মনে ঢেউও তুলতে পারেনি কেউ।তবে এতে তাদের দোষ নেই,দোষ নেহাৎই আমার একবগ্গা স্বভাবের ।তা বাপু প্রণয়প্রার্থী যদি দেখে অনেক বোঝানোর পরেও একজন খ্যাপা ষাঁড়ের মতো কেবল না না বলে যাচ্ছে ,তাতে তারই বা দোষ দিই কি করে।!!দেশে কি আর মেয়ে নেই!!কি দেখেই বা কেউ আমার প্রেমে পড়বে।বিদ্যাবুদ্ধির দৌড় তো না বলাই ভালো,দেখতেও তো কাগের ঠ্যাং,বগের ঠ্যাং।তবু যৌবনের ধর্ম ।কত প্রেম এখানে পেকে উঠলো।কতজন semi final এ উঠেও final এ ল্যাং খেয়ে গেল।আজও কত স্মৃতি,কত প্রেম,হর্ষ,বিষাদ রাত নামলেই কানাকানি করে প্রত্যেক দেওয়ালে দেওয়ালে ।আজও মাঠ,ক্যান্টিন,পুকুরপাড়,গাড়িবারান্দা জুড়ে আমাদের সব ছায়ারা জ্বলে ওঠে জোনাকী হয়ে।আলো দেয়,ভরসা দেয়,ভালোবাসা দেয়।তারপর আরো অনেক জোনাকী আসে,সঙ্গে নিয়ে আসে আরো গল্প ,আরো ভালোবাসা।
এমনি করে ভালোবাসা বেড়ে বেড়ে যায়।আরো বেঁধে বেঁধে নেয় পরস্পরকে ।ঠিক এমনি করেই এই পরিবার গড়ে উঠেছে।আরো আলো,আরো ভালোবাসায় রোজ একটু একটু করে বড় হচ্ছে ।আমি তনিমা দি কে চিনতাম না।যশোবন্ত্ দা'র মাধ্যমে চিনলাম।একে একে আরও বন্ধু পেলাম।এরা যেন সবাই নিজের লোক।অনেকের কাছেই অপরিচিত আমি।তবুও সবাই আমার লেখা পড়ে,উৎসাহ দেয়।এটাই তো আত্মীয়তা।এগিয়ে চলার পাথেয়।
ভালো থেকো সব্বাই।কেউ কাউকে ছেড়ে যেওনা।যারা হারিয়ে গেছে,মসিউর দা,ইন্দ্র দা,আমার বন্ধু সিরাজ-আসলে ওরা আমাদের মাঝেই বেঁচে থাকবে।আমরাই বাঁচিয়ে রাখবো। তাইনা,ভুল বল্লাম?
শেষ।।

3 comments:

  1. খুব সুন্দর লেখা

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর লেখা

    ReplyDelete
  3. মৃত্তিকা, তুমি বাঁ হাতে ভেল্কি দেখিয়েছিলে! খুব সুন্দর লিখেছ ।

    ReplyDelete