Sunday, July 24, 2016

যেতে যেতে পথে : সঙ্ঘমিত্র মাকুড়

হাসনাবাদ লোকাল:
কাজের সূত্রে গত বছর বসিরহাট যেতে হত প্রায়ই, ট্রেনে যাওয়াটাই সুবিধার হতI রাস্তায় যেতে বেশি সময় লাগত, সে গাড়ীতে গেলেও I হাসনাবাদ স্টেশন বসিরহাটের কযেকটা পরেইl ওই লাইনের বেশীর ভাগ ট্রেন হয় হাসনাবাদ নয় বসিরহাট গামী l শিয়ালদা থেকে ছেড়ে বারাসাত পর্যন্ত বনগাঁ লাইনে এসে আলাদা হয়ে যায় ডাইনে l
যাক যেকথা বলছিলাম, ট্রেনে চাপতাম বেলা দশটার দিকে l তখন ভিড় মাঝারী,ফলে দু একটা স্টেশন পেরোতেই জানলার ধারে বসতে পেতাম l এমনিতে কিন্তু এই রেলপথ ভিড়ের জন্য বিখ্যাত l ভোর থেকে মাঝরাত হাজার হাজার লোক যাচ্ছে আসছে! আমি রুখাশুখা দেশের মানুষ,আমি অবাক চোখে দেখতাম দু পাশের প্রকৃতি ,জোলো প্রকৃতি সোজাসাপ্টা মাঠ, নয়নজুলি, আর অজস্র আমবাগান l সময়টা মার্চ এপ্রিল তাই আম ফলন্ত,প্রচুর পরিমানে ঝুলে নানা কিসিমের আম l আর আম উঠে আসত ট্রেনেও, কাঁচা আম ! .....


হাসনাবাদ লোকাল........

.....আমার অভিজ্ঞতায় আম টা প্রথম I আমি ট্রেন এর হকার দের কখনো আম ফেরি করতে দেখিনি, তাও কাঁচা আম,আবার কেটে l যাত্রীরা বেশ উৎসাহ দেখায় আমের ব্যাপারে l কেউ কেউ গোটাও কিনে নিয়ে যান l ইস্কুলগামী ইস্কুল ফেরতা দিদিমনিরা তো হৈহৈ করে কেনেন l আমি একলা থাকি তাই রসে বঞ্চিত lট্রেনএ ফেরির জিনিস গুলি আমার কাছে সবসময়ই আকর্ষনের বস্তু I ঝুড়ি ভরা আম ছাড়াও আরো
কয়েক টা বিশেষ জিনিস বিক্রী হত বা হয় এই লাইনে l তল্লাটের ছানা মিস্টি প্রসিদ্ধ,তাই ট্রেনে উঠলে দেখা েলে মাখা সন্দেশ বা কাঁচা সন্দেশের বড় বড় বালতি নিয়ে় হকারের l সঙ্গে দাঁড়ি পাল্লা আর পাতা lওরা ওজনে সন্দেশ বিক্রি করে l মাখা সন্দেশ খেতে অতি উত্তম l ওদিকে মাসীর বাড়ী হবার সুবাদে ছোটবেলা থেকে আমার জানাশোনা মাখা সাথে l তবে এরও যে নানা ভ্যারাইটি আছে তা আগে জানতাম না l গোটা ২৪ পরগনা জুড়েই মা্খা মাখি এই সন্দেশএর l বসিরহাট যেতে বাস রাস্তায় পড়ে যে রঘুনাথপুর, সেখানের সন্দেশ প্রায় ছানা হেন, মিহি অল্প মিস্টি l মছলন্দপুর স্টেশনের পাশে যশোর মিস্টান্ন ভান্ডারে যে জিনিস পাওয়া যায় তার সাথে এর বিস্তর ফারাক l কি কথায় কি এসে পড়ল l ট্রেনের জিনিস এর গুনমান নিশ্চয় দোকানের মতো নয় , তবে সাধারন লোকের ওতেই তৃপ্তিl.....

হাসনাবাদ লোকাল.......
...আরেকটা জিনিস নতুন,অন্তত আমার চোখে,ট্রেনের কামরায় দই এর বিক্রিI এটাও গরম কালে বেশী বিক্রি হতে দেখেছিI আশ্চর্য কি আর,এই এলাকায় ঘোষ বংশীয় দের বাড় বাড়ন্ত,ঘরে ঘরে গোপালন,মিস্টির প্রচুর কারবারI গোমাংস গো-পাচারেও এদিকের নাম আছে,তবে সে অন্য প্রসঙ্গIএসব দেখতে দেখতে ,মাঠ আর ভেড়ী দেখতে দেখতে পৌছে যেতাম বসিরহাট বা অফিসফেরৎ বারাসাতে
I
আর দুটো খাদ্যের কথা না বললে হাসনাবাদ লোকালের বৈশিষ্ট তুলে ধরা যাবেনাI এক ' কাঠি গজা I গোয়ালাদের দুধের ড্রামের মত পাত্রেফেরিওয়ালারা আনে,সস্তাও খুব I ওজন করার সময় এতোটাই হেলে যাবে পাল্লাটা যে আপনি ভাববেন নাফা ' খুব! খেয়েছি দু একবারIএকমাত্র এই কাঠিগজাই বারাসাত বা অন্যান্য জায়গায় ফেরি করে,বাকী যাদের কথা বল্লাম তাদের দেখা বারাসাতের এপাশে আর মেলেনা! শিযালদার দিকে এই হকারদের আমি অন্তত দেখিনি I সব শেষে আসা যাক চা ওলাদের কথায়I চা ওলা নানা রকম দেখেছি লোকাল ট্রেনেI এখানের চাএর অারেঞ্জমেন্টটা বলা যাকI একটা বালতির উপর থালা রেখে,তার উপর গেলাস বসিয়ে ছাঁকনিতে চা দিয়ে গরম জল ঢেলে তৈরী হয় লিকারI তার পর দুধ বা লেবু যেমন যেমনI চলন্ত ট্রেনে এমন রাজকীয় ব্যবস্হা চিন্তা করা যায়না!সীমান্ত ঘেঁষা,বাদা ঘেঁষা অঞ্চলে এভাবে ছুটে চলে লোকাল ট্রেন, সকালসাঁঝI যাত্রীদের বৈশিষ্টও বলার মতো, তবে সে কথা হবে আর কখনো I
--সংঘমিত্র মাকুড়
(
শেষ)

2 comments:

  1. সরল বাক্যে জীবনের প্রকাশ

    ReplyDelete
  2. সরল বাক্যে জীবনের প্রকাশ

    ReplyDelete