Thursday, August 4, 2016

কলেজ স্মৃতিকথা-১৫ : রূপক সামন্ত

এগারো ক্লাসের শেষের দিকে পরিচয় হোলো বিকাশ আর শ্যামা ওরফে চন্দন ওরফে ভাইয়ার সাথে। এক শীতবিকেলে আমাদের বাড়ির সামনের মাঠটায় ব্যাডমিন্টন খেলছি আমি, শুদ্ধশীল, ভাস্কর ও অন্যরা। দুটি সাইকেলে দুজন আমাদের বয়সী ছেলে এসে থামলো শুদ্ধশীলের ডাকে। ভাইয়া শুদ্ধর মাসির ছেলে। বিকাশ ওর ছোটোবেলাকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওরা কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে। আমাদের বন্ধুত্বের সেই শুরু।

মাধ্যমিক পরীক্ষার পরপরই সিগারেটে টান দিতে শিখি। সেটা অবশ্য আমার বড়োপিসির বাড়িতে। আমাদের চাঁদুর গ্রামের পাশের গ্রাম সন্তোষপুরে আমার বড়োপিসির বাড়ির তিনতলার ঘরে পিসতুতো দাদা টিঙ্কুদা তখন রাতজেগে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার পড়া করছে। আমি বসে থাকতে থাকতে ওর প্যাকেট থেকে নিয়ে একটা কিং-সাইজ ক্যাপস্টেন সিগারেট ধরালাম জানালায় বসে। সেই শুরু। তো বাঁকুড়ায় যে সবাই চেনা। সিগারেট খাবার জায়গা পাই কোথায়! সিগারেট ধরালেই মনে হয় কেউ না কেউ দেখছে। এবার বাবার কানে উঠলো বলে। তাই আমরা সিগারেট খাবার আর আড্ডা মারার একটা দারুণ জায়গা খুঁজে বের করেছিলাম।

তখন কবরডাঙার রাস্তাটা ছিলো ভাঙাচোরা, মোরাম বিছানো। বাড়িঘর প্রায় ছিলোই না। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক দেবী রায় স্যারের বাড়িটা ছিলো একেবারে শেষের দিকে। আর রাস্তাটার শুরুর দিকে শম্ভুবাবুর বাড়িটাও তখন হচ্ছিল বলে মনে পড়ছে (নাকি হয়ে গিয়েছিলো!!)। আমি, বিকাশ, চন্দন, দীপ্ত ও আরও সব বন্ধুরা বিকেলবেলায় স্কুল-কলেজ থেকে ফিরে ওই রাস্তা দিয়ে গিয়ে সোজা কবরগুলোর উপরে বসতাম। বিচিত্র সব আলোচনা হোতো। মেয়েদের নিয়ে আলোচনাও হোতো জোরদার। কার সঙ্গে কার ইন্টুমিন্টু চলছে, কোন মেয়ে কার দিকে আড়চোখে চেয়ে হেসেছে, কে কার কথা ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছে, কোন ছেলে বা কোন মেয়ে কটা করে চালাচ্ছে একসঙ্গে --- এমনই নানা গবেষণাধর্মী সমাজতত্ত্বমূলক আলোচনায় আমরা মশগুল থাকতাম। আমাদের মধ্যে বিকাশ বরাবরই রমণীমনোহর। শুদ্ধশীল আর ভাইয়াও কম যেতো না। একই মেয়ের পিছনে দুবন্ধুর- এক ফুল দো মালি- প্রতিযোগিতাও কম ছিলো না। ভাইয়ার তখন ক্লাসেরই এক সুন্দরীর সঙ্গে প্রেম নামক রোগটি শুরু হয়েছে। ওদের নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনতাম আর হিংসে হোতো। আমার দিকে কেউ কেন একবারও তাকায় না!! আসলে রমণী - ভোলানো কান্তি ও গুণ কোনোটাই আমার ছিলো না তো। তার উপর ছিলাম স্বভাব-লাজুক। শুনেছিলাম মেয়েরা নাকি ডাকাবুকো ছেলেদের খুব পছন্দ করে। আমি তো তেমনটা ছিলাম না কোনোদিনই।

( আবার আসিবো ফিরে )

No comments:

Post a Comment