Thursday, August 4, 2016

কলেজ স্মৃতিকথা-১০ : রূপক সামন্ত

মিশন স্কুলে অনেক বন্ধু হোলো। রজত, সঞ্জীব নামহাতা, দেবব্রত রুইদাস, গৌতম দাস, শুদ্ধশীল, মোটা অরূপ এমনই আরও অনেকে। খেলাধূলা, মারামারি, হৈ হৈ করে দিন কাটতো। তখন তো স্কুলের চারপাশে পাঁচিল হয় নি। রাস্তার ধারের পাঁচিলটাও ছোটো ছিলো। আমি, রজত, শুদ্ধশীল, গৌতম ও আরও কেউ কেউ ব্রাউন ছাত্রাবাসের পাশের ঝোপঝাড় ভরা রাস্তাটা দিয়ে গিয়ে পাঁচিল টপকে স্কুলডাঙার পথ ধরতাম। যেখানটায় পাঁচিলটা টপকাতাম ঠিক সেখানেই ঠেলা গাড়িতে চপ ভাজতো দি গ্রেট শ্যামদা। শ্যামের আলুর চপ লোকে লাইন দিয়ে কিনতো। আমাদের পয়সা না থাকায় জুলজুল করে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতাম। কখনও কখনও বাড়ি থেকে এসে শ্যামের চপ কিনে নিয়ে গেছি। লোকে বলতো- শ্যাম অমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে চপ ভাজলে কি হবে, ওর তিনতলা বাড়ি। সব ওই টাকাতেই করেছে। শ্যামদার ছেলে আমাদের স্কুলেই পড়তো। জীবনে তারপর বহু বিখ্যাত চপ গপগপ করে খেয়েছি। সেই সোয়াদ আর পেলাম না কোথাও।

স্কুলে পড়ার সময় কলেজের দিকে নজর দেওয়ার কোনো সময় আমাদের ছিলো না। আমরা তখন সবাই রাজা আমাদের সেই সব পেয়েছির রাজ্যে। তবে আসা যাওয়ার পথে সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় শাড়ি পরা দাদা-দিদিদের দেখতাম একটা ডায়েরী দুলিয়ে গল্প করতে করতে চলেছে। আমরা কেমন যেন একটা ভয় আর সম্ভ্রম মেশানো চোখে দেখতাম আর রাস্তা ছেড়ে দিতাম। কেউ কেউ ফিসফিস করে বলতো- ওরা কলেজে পড়ে। প্রেম করে। সিগারেট খায়। ভাবতাম- আমরা এতো বইখাতা বাক্সে করে নিয়ে যাই, আর ওরা ওইটুকু ডায়েরীতেই সব লিখে ফ্যালে!!! এ আবার কিরকম পড়াশোনা রে বাবা!!! মাঝেমাঝে স্কুলের পিছনে কলেজ ট্যাঙ্কের ঘাটে এসে দাঁড়াতাম। বা ক্লাসের জানালা দিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম ওপারের ডাইভিং T টার দিকে। দেখতাম হাফপ্যাণ্ট বা গামছা পরে কেমন হাতজোড় নীচুমাথা করে ঝপাং করে ঝাঁপ দিচ্ছে। তারপর একচক্কর সাঁতার কেটে থাম ধরে উঠে আবার ঝপাং। এপারের ঘাটে অনেকেই স্নান করতো, কাপড় কাচতো, গুড়াখু দিয়ে দাঁত ঘষতো। দেখতাম কলেজ মাঠে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। চারপাশে লোক ঘিরে দেখছে। আর দেখতে পেতাম সেই নৌকোঘরের ভিতরে রাখা নৌকাদুটোকে। স্কুলের একেবারে প্রথমদিকে, ১৯৭৭ সাল নাগাদ, নৌকো বাইচ প্রতিযোগিতাও যেন দেখেছি বলে আবছা মনে পড়ছে। তারপর দিন গ্যালো, বছর গ্যালো সেই নৌকোদুটো জলে ভিজে, রোদে পুড়ে আস্তে আস্তে জীর্ণ হতে হতে একদিন হাওয়া হয়ে গ্যালো। ঘরটাও ভাঙাচোরা হয়ে মনগুমরে থাকতে থাকতে ভেঙেই পড়লো একদিন। কলেজের বুক থেকে চিরতরে বিদায় নিলো সাহেবি ঐতিহ্যের এক নজির। ব্রাউন সাহেব আর মিচেল সাহেবের ভূত হয়তো কষ্ট পেয়েছিলো একটু। কলেজীয় জীবন এগিয়ে চললো আপন পথে।

( আবার আসিবো ফিরে )

No comments:

Post a Comment