Friday, August 5, 2016

Naughty বিনোদন-ই ( ই for ইন্টারনেট ) : যশোবন্ত্ বসু

( এক ) একটা বয়সে এসে ছেলেরা মেয়ে দেখে। মেয়েরাও ছেলে দেখে। যারা দেখে না তাদের কাউন্সেলিং দরকার কিংবা তাদের হর্মোন এলোমেলো। বয়:সন্ধির সেই সব আলো আঁধারি পেরিয়ে যখন কলেজজীবন,তখনতো বাঁশ বনে ডোম কানা। প্রাক্ কলেজকালে " লাইন মারা " শব্দটির সঙ্গে জানপয়চান হয়ে গিয়েছিল ভালো মতনই। খ্রিস্টান কলেজের বি-গ্রাউন্ডে অরুণাংশু ট্রফি বা কালিকানন্দ স্মৃতি শিল্ডের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট গুলো হত। আমরা জেলা স্কুল থেকে দল বেঁধে খেলা দেখতে আসতুম। সেই ক্রিকেটের টানেই খ্রিস্টান কলেজের চৌহদ্দিতে আমাদের দলগত এন্ট্রি। খেলার ফাঁকে ফাঁকে কলেজের রোম্যান্সস্কেপও আমাদের নজর টানত। কোনও কোনও গাছের তলায় বা ক্যান্টিনের বারান্দায় যে-সব জুটি চোখে পড়ত তারা যে " প্রেম করছে " এটা আমাদের কান কামড়ে বুঝিয়ে বলার দরকার হত না। নিখাদ পাকা ছিলুম তো আদতে !
( দুই ) " লাইন মারা " ব্যাপারটা আমরা আগেই জেনে গিয়েছিলাম। এই জ্ঞানের সফল ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা গেল কলেজে ভর্তি হবার পর। খুব তালেবর কয়েকজন বন্ধুবান্ধব একলব্যের অধ্যবসায়ে ও কপালজোরে " লাইন মেরে " কোনও না কোনও " মেয়ে পটিয়ে " ফেলল। তারা তখন আমাদের চোখে রীতিমত হিরো !
"লাইন মারা"র গায়ে গায়ে আরেকটা শব্দ খুব চলত, "গুড় খাওয়া"। কোনও মেয়েকে দেখে ভালো লেগে গেলে তাকে মনে মনে প্রেমিকা হিসেবে ভেবে রোমান্টিক ফ্যান্টাসি ফেঁদে বসাকে বলা হত "গুড় খাচ্ছে"।
লাইন মারা যে শুধু একতরফাই হত তা ভাবলে বড় মিথ্যাচার হবে। মেয়েরাও লাইন মারত, তবে ছেলেদের মতো অত বোদা, হ্যাংলা বা ড্যাবড্যাবে সাব স্ট্যান্ডার্ড ভঙ্গিতে নয়।
জন্মরহস্যময়ী মেয়েদের এইসব ব্যাপার গুলি ছিল অতীব সূক্ষ্ম,নিপাট ও নিপুণ। প্রিয়তম বা নিকটতম বান্ধবীটি ছাড়া তা টের পাওয়া শিবেরও অসাধ্যি। কাজেই আমরা যত সহজে ম্যালথাসের জনসংখ্যার তত্ত্ব বুঝতুম বা যে-সপ্রতিভতায় টাইট্রেশন টেস্ট করে ফেলতুম,তত সহজে মেয়েদের নীরব নয়নে ফুটে ওঠা গোপন কথাটি ডিকোড করা যেত না মোটেই। আমাদের পরের প্রজন্ম অবশ্য এই " লাইন মারা "কে পাল্টে নিয়েছে " ঝাড়ি মারা"য় ।
( তিন ) বার্ধক্যে যেমন দ্বিতীয় শৈশব, চল্লিশ পেরোলে তেমন চালশে ও দ্বিতীয় বয়:সন্ধি। কথায় বলে না,নটি ফর্টি ? " লাইফ বিগিন্স অ্যাট ফর্টি " বলেও একটা কথা আছে। যে-লাইফ ফর্টিতে এসে নতুন ঢঙে শুরু হয়,সে ঝোপ বুঝে নটিও হতে পারে। বিশেষ করে এই যে ভার্চুয়্যাল ভুবন, এখান থেকে অনেক চল্লিশোর্ধই Naughty বিনোদন খুঁজে নিতে কার্পণ্য বোধ করছেন না, এসব গপ্পো আমাদের নন্দদার মুখে শোনা।
নন্দদা বলছিল , দেখ ভোম্বল, ভার্চুয়্যাল জগতের রোমাঞ্চটাই আলাদা। এখানেতো আর " দাদা ভদ্রভাবে দাঁড়ান,বাড়িতে কি মা বোন নেই ? " টাইপ ঝঞ্ঝাট আর বখেড়া গুলো নেই। রাশি রাশি মিথ্যে ও ফাঁপানো গল্পের অনেক আকর্ষণ টাঙানো আছে এদিক ওদিক।তুই ধর কলেজজীবনে জিভে ধরে যে-সব আবেগের কথা ছকে-রাখা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজকে বলতে পারিস নি, এই সোস্যাল নেটওয়ার্কে এসে দিব্যি কাছা-খোলা হয়ে তাই বলে ফেললি দেওয়ালে বা গোপন বাক্সে। রিসিভিং এন্ডে যিনি অনলাইন তিনি সেটা ইক্যুয়ালি এঞ্জয় করলেতো পোয়া বারো,আর যদি ভদ্রমহিলা ভয়ঙ্কর রেগে রিঅ্যাক্ট করেন, " আরে ইয়ার,জাস্ট জোকিং, তুমি খুব ভালো বন্ধু " বলে দু'চারটে স্মাইলি বা স্টিকার ফিকার পাঠিয়ে ম্যানেজ করে সে যাত্রায় প্রোফাইল বাঁচালি। কিছুদিন পরে না হয় আবার অন্য প্রোফাইলের দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাস।
তবে ভোম্বল,সিগন্যাল গুলো ঠিকঠাক পড়তে হবে রে পাগলা। কে সিরিয়াসলি হৃদয় শেয়ারিং আর কে জাস্ট জোকিং বা টাইম পাসিং , দুধ ও জলের এই ফারাক গুলো যদি গুলিয়ে ফেলিস তবেই কেলো। ভুল জায়গায় খাপ খুলে মাল ছড়িয়ে পয়মাল করিসনি বাপ,তাইলে আমার প্রেস্টিজ পাংচার !
বললুম, নন্দদা, এসব কেস আমিও কিছু কিছু জানি। তবে সবচেয়ে রগড়টা হয় যখন দেখি ঝেড়ে মিস-পাস হচ্ছে আর গোল গুলো অফসাইডের দরুন বাতিল।
নন্দদা চোখ টিপে বলল,ওরে থাম থাম । মায়ের কাছে মাসির গপ্পো আর করিসনি। ঐ জন্যেই তো ছড়া লিখেছি : তিনটে ধেড়ে চারটে ধাড়ি কে যে কাকে মারছে ঝাড়ি এসব প্রশ্ন কূট । ভার্চুয়্যালি ছুটছে যে-মন ছক্কা যখন চাইছে ভীষণ পড়ছে কেবল পুট ।। ( শেষ )

No comments:

Post a Comment