Thursday, August 11, 2016

বেন্ড ইট লাইক বাঁকাশ্যাম : যশোবন্ত্ বসু



শব্দকল্পদ্রুম থেকে শব্দ ঝরে পড়ছে । পড়ছে তো পড়ছেই । সেসব কুড়িয়েই এইসব । ছাঁচ আর খোল পালটে যাচ্ছে কোনও শব্দের, কোনও শব্দের ব্যবহার। "মেয়েটি খুব কিপ্টে" না বলে "মেয়েটি খুব হিসেবি" বলছি । কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিয়ো না এই নীতিবোধে "ছেলেটি খুব বোকা" না বলে বলছি, "ছেলেটি খুব সরল" । কিন্তু ছেলেটি বোকা হলেও নিশ্চয় ততটা বোকা নয় যে, তার বউয়ের যমজ বাচ্চা জন্মানোর খবর শুনে "দ্বিতীয় বাচ্চাটার বাবা তাহলে কে " ভেবে ভেবে মাথার চুল ছিঁড়বে নিদ্রাহীন সারা রাত ।
শব্দকে কখনও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছি, কখনও বর্শার মতন। কুকথায় ফুঁড়ে দিচ্ছি বুকপিঠ ।
কিছু কিছু শব্দ বলবার জন্যে জিভ নিশপিশ করে খুব। ছোটবেলায় নতুন কোনও খেলনা পেলেই যেমন সবাইকে দেখাতে ইচ্ছে করত। আশির দশকে সিনেমা হলে ছবি শুরুর আগে দেখানো সেই এইচ এম টি ঘড়ির বিজ্ঞাপনটা মনে করুন, নতুন ঘড়ি দেখাতে হাত উঠে যাচ্ছে কারণে অকারণে। ব্যাপারখানা তেমনই । "চাপ নিবি না" বা "ঘেঁটে ঘ "এই কথাগুলো পাব্লিক ডোমেনে একবার না একবার বলতেই হবে, নইলে আপডেটেড থাকা যাবে না।
আবার কিছু শব্দ বাংলার বদলে ইংরেজিতে বলাটাই নাকি স্মার্টনেস ।
ছ্যাঁচড়া বলতে আমাদের অস্বস্তি হয়, মিক্সড ভেজ অনেক স্মার্ট শব্দ। কেটারিং ব্যবসা ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে আমিষ বা নিরামিষ ছ্যাঁচড়া আমাদের মেনু কার্ড থেকে অদৃশ্য।নবরত্নকোর্মা নামের একটা গ্রাম্ভারি শব্দ চালু হয়েছে বটে,কিন্তু তার স্বাদ সেই ছ্যাঁচড়ার ধারেকাছে আসেনা । আমার কিন্তু ছ্যাঁচড়া বলতেই বেশি ভালো লাগে। ওদের হয়তো লিখতে ভালো লাগে না। " চাকরি করি " বলার মুখ কমে যাচ্ছে দ্রুত, "জব করি " বলার মুখ বেশি চলছে। মেয়েরা আজকাল "আমার স্বামী " বা " আমার বর " না বলে বলছে " আমার Husband "। কোনও কোনও লিপস্টিক-রাঙা ঠোঁট থেকে আবার Husbend উচ্চারণও ঝিকিয়ে বেরোচ্ছে । বরেরা আর কত বেন্ড হবে ?


No comments:

Post a Comment