Wednesday, August 3, 2016

কলেজ স্মৃতিকথা-৭ : রূপক সামন্ত

আমাদের ভাড়াবাড়ির দেবদাসবাবুর পরিবারের কথা বলতে মনে পড়ে গ্যালো এক ফুটফুটে বালিকার কথা। তার নাম ঝুমা। দেবদাসবাবু ছিলেন ঝুমার পিসেমশাই। ঝুমাদের বাড়ি পাঠকপাড়ায়। মাঝেমাঝেই ঝুমা ওর বাবা মায়ের সঙ্গে আসতো। ঝুমা আমার চেয়ে বছরখানেকের ছোটো। সেই ঝুমা পরে কলেজে সাম্মানিক বাংলা বিভাগে ভর্তি হোলো। ঝুমাকে কলেজের ছেলেরা নাম দিয়েছিলো পরমা। ঝুমা এখন ঘোরতর সংসারী। আমার প্রায় সব লেখাতেই সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে। নিজে কিছু লেখে না।

আমার সময় কালীতলা গার্লসের চার ক্লাস অবধি ছেলেমেয়েরা একসঙ্গেই পড়তো। তবে আমরা মাত্র তিনজন ছেলে পড়তাম একগাদা সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে। আমি, মোটা অরূপ আর অমরনাথ - এই ত্রয়ী ওই রমণীয় বালিকামহলে মূর্তিমান হনুমানের মতো বিরাজ করতাম। তখন বড়দি ছিলেন সুরুচি দিদিমণি । ভীষণ কড়া। আর ছিলেন স্কুলডাঙারই মুক্তি দিদিমণি। বড়দি কিন্তু বাঁকুড়ায় পিসিমণি নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। নাটকের সূত্রে বড়দি আর বনু পিসিমণির সঙ্গে বাবার খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিলো। অরূপও পরে এই কলেজে পড়েছে। খুব জনপ্রিয় ছিলো অরূপ।

সেই সময়ের বান্ধবীদের মধ্যে নন্দিতা কুণ্ডু আর অরণিও পরে কলেজে পড়েছে। নন্দিতা বাঁকুড়ার বিখ্যাত কুণ্ডু পরিবারের রঞ্জিত কুণ্ডুর মেয়ে। আবৃত্তি, গান, নাটক - এইসব সাংস্কৃতিক জগতে কুণ্ডু পরিবার বাঁকুড়ায় অগ্রগণ্য। সুভাষ কুণ্ডু আর পার্থ কুণ্ডুর আবৃত্তি তো কিংবদন্তি পর্যায়ের। নাটক নির্দেশনায় সুভাষকাকু খুবই নামকরা ব্যক্তিত্ব। সুভাষকাকু আর পার্থকাকু দারুণ অভিনয়ও করতেন। পার্থকাকু আবার দুর্দান্ত ছবি তুলিয়ে। বাবার একটা দারুণ ছবি তুলেছিলো পার্থকাকু। সে ছবি আজও রাখা আছে চাঁদুর বাড়ির লাইব্রেরীর মাথায়। পার্থকাকুর ব্রাউন ছাত্রাবাসের সামনে থেকে তোলা আমাদের মিশন বয়েজ স্কুলের একটি ছবি স্কুলের পত্রিকার প্রচ্ছদ হিসাবে ব্যবহার করা হোতো। সুভাষকাকুর গলায় শোনা- পৃথিবীর কলজেটা/ ঘুণ ধরে হয়ে গেছে ছারখার / হয়তো থাইসিস/ কিংবা থ্রম্বোসিস/ নয়তো বা একেবারে ক্যান্সার - কবিতাটা আজও কানে বাজে। পার্থকাকুর গলায় শোনা - ছিপখান তিনদাঁড় তিনজন মাল্লা -- আহা, ভোলা যাবে না কোনোদিনও। নন্দিতা ও তার ভাই অনিন্দ্য খুব ভালো বাচিকশিল্পী। এরা নাটকেও অভিনয় করতো।

নন্দিতাদের পরিবারের সঙ্গে বাবার দারুণ ঘনিষ্ঠতা ছিলো। আমার সঙ্গেও খুব অন্তরঙ্গতা ছিলো ওই পরিবারের। কলেজে পড়ার সময় মাঝেমাঝেই যেতাম ওদের বাড়ি। নন্দিতা কলেজের মাঠে বসে আড্ডা দিতে দিতে একবার বলেছিলো -তোকে কি দেখবো রে! তুই তো গ্যাঁড়া, প্যাংলা। তোর চেয়ে স্যারকে দেখতে শতগুণে ভালো। এহেন পিতৃগর্বে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে না পেরে আমি বেশ কিছুক্ষণ নাক চুলকে ছিলুম তা বেশ মনে আছে। নন্দিতার সঙ্গে আজও যোগাযোগ আছে। দূরভাষে ধমক দিতে ছাড়ে না এখনও।

এই বৃহত্তর কুণ্ডু পরিবারের মেয়ে কাকলীও গানে, অভিনয়ে দারুণ পারদর্শী ছিলো। কাকলীর সঙ্গে আমার ছেলেবেলার বন্ধু শুদ্ধশীলের প্রেম করে বিয়ে হোলো। ওরা আমার বিয়েতে চাঁদুরের বাড়িতে এসেছিলো। আর এসেছিলো আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু শ্যামা ওরফে চন্দন আর ওর স্ত্রী আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অনিতা। চন্দন ও অনিতা দুজনেই একই ইয়ারে কলেজে সাম্মানিক অর্থনীতি পড়তো। খুব আনন্দ হয়েছিলো সেসময়ে।

অরণির বাবা ক্ষিতীশবাবু ছিলেন ডাক্তার। ক্ষীণদেহী অরণি কলেজে সাম্মানিক রসায়ন বিভাগে পড়তো। অরণির বিশালদেহী বোনও কলেজেরই ছাত্রী। দুবোনের একই রিক্সায় কলেজ আসার দৃশ্যটা ছিলো বেশ মজাদার। আমরা অনেক টিপ্পনি কাটতাম। অরণির জীবনের পরিণতি খুবই দুঃখজনক।

( আবার আসিবো ফিরে )

No comments:

Post a Comment