Tuesday, August 16, 2016

কলেজ স্মৃতিকথা-২১ : রূপক সামন্ত

কলেজ মোড়ের আড্ডা ছাড়াও প্রায় বিকেলেই প্রতাপবাগানের বাঁকুড়া ইনস্টিটিউট এ যেতাম। রজতও যেতো বলে মনে পড়ছে। দীপ্তই প্রথম নিয়ে গিয়েছিলো ওখানে। দোতলা বাড়িটার উপরতলায় বেশকিছু ইনডোর খেলার ব্যবস্থা ছিলো। টেবিলটেনিস, ক্যারম এসব ছিলো। এই দুটো খেলার প্রতিই আমার ঝোঁক ছিলো। খুব ভালো খেলতে না পারলেও খেলতে ভালো লাগতো। আর একটা ঘরে অনেক খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, কমিকস এসব থাকতো। পড়তাম সেসব। অনেক ছেলে যেতো এই ইনস্টিটিউটে। এক বিকেলে খেলাধূলা চলছে, দীপ্ত বললো- আজ একটু থেকে যাস। একটা মিটিং আছে। কিসের আবার মিটিং রে বাবা! দেরী হলে আবার বাড়িতে বকুনি আছে। তখনও তো অতোটা লায়েক হয়ে উঠি নি। যাইহোক থেকেই গেলাম। সন্ধ্যের মুখে মুখে একটা ঘরে শতরঞ্জি পেতে বসা হোলো। অনেক ছেলেমেয়ে হাজির হয়েছে। টুকটাক কথা চলছে। একজন বেঁটেখাটো, ধুতি- পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি ঘরে ঢুকলেন। চোখে কালো, মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথার কাঁচাপাকা চুলগুলো এলোমেলো। সবাই উঠে দাঁড়ালাম। সেই প্রথম দেখলাম বিমান বসুকে। অনেক কথা আলোচনা করলেন তিনি। ঠিক কি নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো তা আজ আর মনে নেই। তবে একটা বিষয় খুব ভালোভাবেই মনে আছে। অনেক ছেলেকেই উনি নাম ধরে ডাকছিলেন। দীপ্তর মতো বারো ক্লাসে পড়া একটা বাচ্চা ছেলেকেও উনি নামে চেনেন দেখে বেশ অবাক লেগেছিলো। এখন বুঝতে পারি যে একজন ভালো সংগঠক হতে গেলে সবাইকে নামে চেনাটা অত্যন্ত জরুরী। প্রতাপবাগানেই ছিলো আদিত্যবাবুর বাড়ি। জেলা স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক। ধুতি-পাঞ্জাবি পরতেন। স্যারের কাছে মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছুদিন পড়েছিলাম। ওঁর ছেলে মলি আমাদের সহপাঠী। যদিও সে জেলা স্কুলে পড়তো। আমরা স্যারের কাছে যখন পড়তাম মলিও পড়তে বসতো। স্যার ভালোই বোঝাতেন। অনেক অঙ্ক করাতেন। কি কারণে স্যারের কাছে পড়া ছেড়েছিলাম তা আর মনে নেই। বারো ক্লাসে পড়ার সময় থেকে শ্যামাপ্রসাদ ওরফে চন্দন ওরফে ভাইয়াদের বাড়িতে আমার যাতায়াত শুরু হোলো। ওরা তখন দোলতলায় একতলা একটা বাড়িতে ভাড়া থাকতো। চন্দনের বাবা রাঘব মুখোপাধ্যায় ছিলেন গোয়েঙ্কা স্কুলের ইংরাজির শিক্ষক। খুব অদ্ভুত ধরণের মানুষ ছিলেন তিনি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একেবারে বন্ধুর মতো মিশতেন। আমি তো সারাজীবন গুরুগম্ভীর বাবাকে দেখেছি। আমার খুব আশ্চর্য লাগতো। ওঁর দুই স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে জমজমাট সংসার। বড়মার ছেলে স্বপনদা আর মেয়ে শিখাদি। ছোটমার ছেলে খোকন ( সত্যব্রত ) আর চন্দন। মেয়ে টুকুনদি। প্রত্যেকেই খুব আন্তরিক। মনে আছে খোকনদা আমাকে প্রথমদিন দেখে বলেছিলো- ইটা আবার কে বটে রে? বিড়ি খাস তো দে একটা। চল গোয়াল ঘরে গিয়ে মেরে আসি। মনে পড়ছে যে সরু গলির মধ্যে দিয়ে ঢুকে ডানদিকে একটা গোয়ালঘর ছিলো। সেখানে আমরা আড্ডা মারতাম আর বিড়ি খেতাম। স্বপনদা, খোকনদা, শিখাদি, চন্দন - সবাই আমাদের কলেজেরই ছাত্রছাত্রী। খোকনদা প্রাণীবিদ্যার ছাত্র, চন্দনের বিষয় অর্থনীতি। শিখাদি ইংরাজি সাম্মানিকের ছাত্রী। স্বপনদার বিষয়টা মনে পড়ছে না। টুকুনদি কলেজে পড়ে নি। ওর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। স্বপনদা ও খোকনদা দুজনেই পরে শিক্ষক হয়েছে। চন্দন তৃতীয় বর্ষে উঠে বায়ুসেনার চাকরী পেয়ে চলে যায়। পরে ওই চাকরী করতে করতেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ইংরাজি নিয়ে এম. এ. পাশ করে। বায়ুসেনার চাকরী থেকে অবসর নিয়ে ও এখন স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মী। রজতের পরে এই চন্দনের সঙ্গেই আমার ঘনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি ছিলো। চন্দনকে বলতাম ভাই। আমার জীবনে ওদের পরিবারের বিরাট প্রভাব আছে। (আবার আসিবো ফিরে)

No comments:

Post a Comment