১৯৮৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করলাম। সেবার আমাদের স্কুলের ফল দারুণ ভালো হয়েছিলো। যতদূর মনে পড়ে ২২ জম প্রথম বিভাগে, ৩ জন তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলো। বাকীরা দ্বিতীয় বিভাগে। কোনো ফেল বা কম্পার্টমেন্টাল ছিলো না। জেলা স্কুলেও সেবার এতো ভালো ফল হয় নি।
মাধ্যমিকের পর আমি বাঁকুড়া ছেড়ে চলে আসার চেষ্টা করেছিলাম। হুগলির চাঁপাডাঙার কাছে খুব ভলো জঙ্গলপাড়া স্কুলে দরখাস্তও করেছিলাম। বাঁকুড়া ছাড়া কিন্তু হোলো না। ফিরে গিয়ে মিশন স্কুলেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলাম। একেবারে শুরুতে আমাদের মাথায় কুবুদ্ধি ভর করলো। সবাই মিলে ঠিক করলাম যে কলেজে ক্লাস করতে যাবো। তখন আমাদের তরুণ মনে কলেজের নানা বাস্তব-অবাস্তব কাহিনী বেশ পল্লবিত হয়েছে। সেইসময় ফুটফুটে কিশোরী দেখলেই মনের মধ্যে একটা অচিন পাখি ডানা ঝাপটায়। আমাদের কেমন একটা বিশ্বাস জন্মেছিলো যে কলেজে গেলে প্রেম হবেই হবে। নিজেদের একান্ত আলোচনায় সে বিশ্বাসে কেবলই পাখার বাতাস লাগতো। বাবার সহকর্মী অধ্যাপক বিবেকজ্যোতি মৈত্রের বড়ছেলে দীপ্ত আমার খুবই ছোটোবেলার বন্ধু। দীপ্ত কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো। যাইহোক সাত পাঁচ ভেবে, নানা ফন্দিফিকির এঁটে হাতে একটা করে ডায়েরী ঝুলিয়ে আমি, রজত, শুদ্ধশীল, ভাস্কর, দেবাশিষ - এরকম কয়েকজন স্কুল কেটে কলেজে গিয়ে হাজির হলাম। তখন কলেজে সেই একদিন বা দুদিন হোলো ক্লাস শুরু হয়েছে। কলেজের কাছে এসে পা আর নড়তে চায় না। লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেই পারছি না। দৃষ্টি হরিতকি গাছের মাথায় লটকে আছে। কোনোরকমে গাড়িবারান্দা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। এবার কোথায় যাবো রে বাবা!! কোথায় এগারো ক্লাসের বিজ্ঞানের পড়াশোনা হয় তা কে জানে। কলেজের ছেলেমেয়েদের চালচলন দেখে হকচকিয়ে উঠছি। আর ভাবছি কি মরতে যে এসেছিলাম এখানে। আমাদের মধ্যে শুদ্ধশীলই একটু হালুচালু ছিলো। সে কিভাবে যেন ক্লাসঘরের সুলুক জেনে এলো। গুটিগুটি পায়ে পৌঁছোলাম বিজ্ঞান বিভাগের দোতলার গ্যালারীর সামনে। অনেক ছেলেমেয়ে জড়ো হয়েছে ক্লাস করবে বলে। অনেকে ভিতরে নিজের নিজের জায়গায় বসে গল্প করছে। আমরা জড়োসড়ো হয়ে এককোণে রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা কলকল করতে করতে এসে ক্লাসে ঢুকছে। কেউকেউ আবার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছে। অনেকেই আমাদের দিকে কেমন যেন চোখে দেখছে। হঠাৎ শোনা গ্যালো- স্যার আসছেন। ব্যাস, দুদ্দাড় করে সবাই ঢুকে যে যার জায়গা নিলো। আমরাও ঢুকলাম মাথা নীচু করে। একেবারে পিছনের সারিতে গিয়ে বসলাম। কোন স্যারের ক্লাস ছিলো তা আর মনে নেই। স্যার ক্লাসে ঢুকে নাম ডেকে পড়াতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে একজনকে দাঁড়াতে বললেন। চেয়ে দেখি জেলা স্কুল থেকে আমাদেরই মতো আসা একজন উঠে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে আমাদের বুক ঢিপঢিপ করছে। স্যারের প্রশ্নের উত্তরে দারুণ ঘাবড়ে গিয়ে সে তখন কি সব ভুল বকতে শুরু করেছে। স্যার ধরে ফেললেন ব্যাপারটা। বললেন, কোন স্কুলের ছাত্র? এখানে কেনো এসেছো? ছেলেটি আমতা আমতা করছে। মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। আমরা মাথা নীচু করে বসে আছি। পাছে ধরা পড়ে যাই। আমার তো আবার আরও বিপদ। বাবার কানে গেলে কি যে হবে তা ভাবতেই কান দুটো কটকট করে উঠলো। স্যার তো তাকে বকেই যাচ্ছেন। মেয়েরা মুচকি মুচকি বিদ্রুপের হাসি হাসছে। ছেলেরা চাপা গলায় মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছে। সে এক ধরণী দ্বিধা হও অবস্থা।
সব দুঃখের যেমন শেষ হয় শেষ হোলো সেই দুঃস্বপ্নের ক্লাস। আর থাকে সেখানে! সটান বেরিয়ে এসে হাঁটা লাগালাম। তা বললে হবে কি। ছেলেরা এসে ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করছে। এরই মধ্যে একজন মোটাসোটা মেয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো - এই তোর নাম রূপক না? প্রথমেই তুই!! ঝাঁ করে মাথায় রক্ত উঠে গ্যালো। রাগ চেপে বললাম -হ্যাঁ। তুমি কি করে জানলে? বললো - জানি। তুই তো আমাদের স্যারের ছেলে। খুব ভালো রেজাল্ট করেছিস। একজন গোটা মেয়ে আমার এতো খবর রাখে, মায় নাম পর্যন্ত জানে দেখে মনের মধ্যে কিরকম একটা হতে লাগলো। কেমন যেন একটা শিহরণ। জানলাম মেয়েটার নাম। এও জানলাম যে মাধ্যমিকে তার রেজাল্টও খুবই ভালো। এক বিচিত্র অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম কলেজ থেকে।
ওই মেয়েটিই পরে সাম্মানিক পদার্থবিদ্যায় আমার সহপাঠিনী হয়। খুব ভালো বন্ধুত্ব হয় আমাদের মধ্যে। সে বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিলো। মনে আছে একবার কলেজে অফ পিরিয়ডে ক্লাসে সবাই আড্ডা দিচ্ছি। আমি স্যারের টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসেছি। হঠাৎ সেই বান্ধবী এসে আমার কানে কানে বললো- আমার একটা দারুণ ইচ্ছা হচ্ছে। আমিও কানে কানে বললাম- কি রে। বললো- তোকে না জড়িয়ে ধরে কিস করতে ইচ্ছে করছে। শুনে তো আমার পেটের পিলে মাথায় উঠলো। কোনোরকমে বললাম- মাইরি বলছি, করিস না। তুই জড়িয়ে ধরলে আমি চেপ্টেই মরে যাবো। এই বলে ক্লাস থেকে দৌড়ে বেরিয়ে সোজা ক্যান্টিনে গিয়ে সিগারেট ধরালাম।
( আবার আসিবো ফিরে )
মাধ্যমিকের পর আমি বাঁকুড়া ছেড়ে চলে আসার চেষ্টা করেছিলাম। হুগলির চাঁপাডাঙার কাছে খুব ভলো জঙ্গলপাড়া স্কুলে দরখাস্তও করেছিলাম। বাঁকুড়া ছাড়া কিন্তু হোলো না। ফিরে গিয়ে মিশন স্কুলেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলাম। একেবারে শুরুতে আমাদের মাথায় কুবুদ্ধি ভর করলো। সবাই মিলে ঠিক করলাম যে কলেজে ক্লাস করতে যাবো। তখন আমাদের তরুণ মনে কলেজের নানা বাস্তব-অবাস্তব কাহিনী বেশ পল্লবিত হয়েছে। সেইসময় ফুটফুটে কিশোরী দেখলেই মনের মধ্যে একটা অচিন পাখি ডানা ঝাপটায়। আমাদের কেমন একটা বিশ্বাস জন্মেছিলো যে কলেজে গেলে প্রেম হবেই হবে। নিজেদের একান্ত আলোচনায় সে বিশ্বাসে কেবলই পাখার বাতাস লাগতো। বাবার সহকর্মী অধ্যাপক বিবেকজ্যোতি মৈত্রের বড়ছেলে দীপ্ত আমার খুবই ছোটোবেলার বন্ধু। দীপ্ত কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো। যাইহোক সাত পাঁচ ভেবে, নানা ফন্দিফিকির এঁটে হাতে একটা করে ডায়েরী ঝুলিয়ে আমি, রজত, শুদ্ধশীল, ভাস্কর, দেবাশিষ - এরকম কয়েকজন স্কুল কেটে কলেজে গিয়ে হাজির হলাম। তখন কলেজে সেই একদিন বা দুদিন হোলো ক্লাস শুরু হয়েছে। কলেজের কাছে এসে পা আর নড়তে চায় না। লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেই পারছি না। দৃষ্টি হরিতকি গাছের মাথায় লটকে আছে। কোনোরকমে গাড়িবারান্দা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। এবার কোথায় যাবো রে বাবা!! কোথায় এগারো ক্লাসের বিজ্ঞানের পড়াশোনা হয় তা কে জানে। কলেজের ছেলেমেয়েদের চালচলন দেখে হকচকিয়ে উঠছি। আর ভাবছি কি মরতে যে এসেছিলাম এখানে। আমাদের মধ্যে শুদ্ধশীলই একটু হালুচালু ছিলো। সে কিভাবে যেন ক্লাসঘরের সুলুক জেনে এলো। গুটিগুটি পায়ে পৌঁছোলাম বিজ্ঞান বিভাগের দোতলার গ্যালারীর সামনে। অনেক ছেলেমেয়ে জড়ো হয়েছে ক্লাস করবে বলে। অনেকে ভিতরে নিজের নিজের জায়গায় বসে গল্প করছে। আমরা জড়োসড়ো হয়ে এককোণে রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা কলকল করতে করতে এসে ক্লাসে ঢুকছে। কেউকেউ আবার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছে। অনেকেই আমাদের দিকে কেমন যেন চোখে দেখছে। হঠাৎ শোনা গ্যালো- স্যার আসছেন। ব্যাস, দুদ্দাড় করে সবাই ঢুকে যে যার জায়গা নিলো। আমরাও ঢুকলাম মাথা নীচু করে। একেবারে পিছনের সারিতে গিয়ে বসলাম। কোন স্যারের ক্লাস ছিলো তা আর মনে নেই। স্যার ক্লাসে ঢুকে নাম ডেকে পড়াতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে একজনকে দাঁড়াতে বললেন। চেয়ে দেখি জেলা স্কুল থেকে আমাদেরই মতো আসা একজন উঠে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে আমাদের বুক ঢিপঢিপ করছে। স্যারের প্রশ্নের উত্তরে দারুণ ঘাবড়ে গিয়ে সে তখন কি সব ভুল বকতে শুরু করেছে। স্যার ধরে ফেললেন ব্যাপারটা। বললেন, কোন স্কুলের ছাত্র? এখানে কেনো এসেছো? ছেলেটি আমতা আমতা করছে। মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। আমরা মাথা নীচু করে বসে আছি। পাছে ধরা পড়ে যাই। আমার তো আবার আরও বিপদ। বাবার কানে গেলে কি যে হবে তা ভাবতেই কান দুটো কটকট করে উঠলো। স্যার তো তাকে বকেই যাচ্ছেন। মেয়েরা মুচকি মুচকি বিদ্রুপের হাসি হাসছে। ছেলেরা চাপা গলায় মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছে। সে এক ধরণী দ্বিধা হও অবস্থা।
সব দুঃখের যেমন শেষ হয় শেষ হোলো সেই দুঃস্বপ্নের ক্লাস। আর থাকে সেখানে! সটান বেরিয়ে এসে হাঁটা লাগালাম। তা বললে হবে কি। ছেলেরা এসে ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করছে। এরই মধ্যে একজন মোটাসোটা মেয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো - এই তোর নাম রূপক না? প্রথমেই তুই!! ঝাঁ করে মাথায় রক্ত উঠে গ্যালো। রাগ চেপে বললাম -হ্যাঁ। তুমি কি করে জানলে? বললো - জানি। তুই তো আমাদের স্যারের ছেলে। খুব ভালো রেজাল্ট করেছিস। একজন গোটা মেয়ে আমার এতো খবর রাখে, মায় নাম পর্যন্ত জানে দেখে মনের মধ্যে কিরকম একটা হতে লাগলো। কেমন যেন একটা শিহরণ। জানলাম মেয়েটার নাম। এও জানলাম যে মাধ্যমিকে তার রেজাল্টও খুবই ভালো। এক বিচিত্র অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম কলেজ থেকে।
ওই মেয়েটিই পরে সাম্মানিক পদার্থবিদ্যায় আমার সহপাঠিনী হয়। খুব ভালো বন্ধুত্ব হয় আমাদের মধ্যে। সে বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিলো। মনে আছে একবার কলেজে অফ পিরিয়ডে ক্লাসে সবাই আড্ডা দিচ্ছি। আমি স্যারের টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসেছি। হঠাৎ সেই বান্ধবী এসে আমার কানে কানে বললো- আমার একটা দারুণ ইচ্ছা হচ্ছে। আমিও কানে কানে বললাম- কি রে। বললো- তোকে না জড়িয়ে ধরে কিস করতে ইচ্ছে করছে। শুনে তো আমার পেটের পিলে মাথায় উঠলো। কোনোরকমে বললাম- মাইরি বলছি, করিস না। তুই জড়িয়ে ধরলে আমি চেপ্টেই মরে যাবো। এই বলে ক্লাস থেকে দৌড়ে বেরিয়ে সোজা ক্যান্টিনে গিয়ে সিগারেট ধরালাম।
( আবার আসিবো ফিরে )
No comments:
Post a Comment