আমাদের স্কুলডাঙার বাড়ির উল্টোদিকের ছোটো একফালি মাঠটাতে আমাদের খেলা জমতো বিকেলে। ওটা ছিলো সংলগ্ন অফিসটার চৌহদ্দি। অফিসটার ভিতরদিকে কোয়ার্টার। শুভঙ্করদা, দীপঙ্করদা আর ভাস্কর ( দে ) -এই তিন ভাই থাকতো ওই বাড়িতে। ওদের আসল বাড়ি ছিলো আরামবাগের কাছে একটা গ্রামে। ভাস্কর আমার স্কুলের বন্ধু। ও ছিলো আমাদের স্কুলের ফার্স্টবয়, আমাদের গর্ব। ওরা তিনভাইই মিশন স্কুলে পড়তো। ভাস্কর কিন্তু কলেজে পড়ে নি। উচ্চ- মাধ্যমিকে জেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা ভাস্কর শিবপুর বি,ই, কলেজে কারিগরীবিদ্যা শিখতে চলে যায়। শুভঙ্করদা ও দীপঙ্করদা একই বছরে কলেজে সাম্মানিক রসায়নবিদ্যা পড়ার জন্য ভর্তি হয়। খুব কম কথা বলতো ওরা দুভাই। বিশেষ করে শুভঙ্করদা। কলেজে ওরা দাদা-ভাই নামে পরিচিত ছিলো। আমাদের চেয়ে দুবছর সিনিয়র (১৯৮৩- ৮৬)। তাই আমরা বলতাম- দাদাদা আর ভাইদা। দীপঙ্করদার সঙ্গে আমার বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে পরে। দীপঙ্করদা আমাদের ব্যাচের একটি মেয়ের প্রেমে পড়লো। মেয়েটি কলাবিভাগে সাম্মানিক পড়তো। দীপঙ্করদা দারুণ সুন্দর দেখতে ছিলো তখন। সেই তুলনায় তার প্রেমিকা একেবারেই ভালো দেখতে ছিলো না। তাতে কি যায় আসে! বলে না- পীরিতে মজিলে মন / গড়ের মাঠও বৃন্দাবন। দীপঙ্করদা পুরো ফিদা হয়ে গ্যালো। সেটা ১৯৮৬ র শেষদিক। কলেজ থেকে বেরিয়ে দাদাদা আরামবাগে ওষুধের দোকান করলো। দীপঙ্করদা বর্ধমানে এম, এস,সি, পড়তে ঢুকলো। আমি তখন ব্রাউন ছাত্রাবাসে আশ্রয় নিয়েছি। দীপঙ্করদা সপ্তাহে অন্তত দুদিন বর্ধমান থেকে পালিয়ে আসতে লাগলো। উঠতো আমার কাছে। দুভাই এ কত গল্প, প্রাণের কথা হোতো। আমাকে প্রচুর সিগারেট খাওয়াতো। চা, মিষ্টি, ডিমটোস্ট, মোগলাই এসব খাওয়াতো। নাইট শো তে সিনেমা দ্যাখাতো। অ্যাতো কিছু করতো শুধু হয়তো দূর থেকে তাকে একঝলক দেখবে বলে। সে তখন হয়ত গান শিখতে যাবে বেলা চারটেয়। দীপঙ্করদা কাঠফাটা রোদ মাথায় করে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। কোনোদিন যদি একটা বা দুটো কথা বলার সুযোগ ঘটতো তাহলে দাদাকে আমার আর পায় কে। আমারও পোয়াবারো। সেবারে চা টা সিগারেট টা একটু বেশিই জুটতো। কতবার হয়েছে যে ভাইদা দুপুরে বর্ধমান যাবে বলে বেরিয়ে দুর্গাপুর বা বর্ধমান থেকে আবার রাতে ফিরে এসেছে। এরকম ভালোবাসা আমি আর দেখিনি। মনে আছে, একবার আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললে এটা ওকে দিতেই হবে। ও যখন সন্ধ্যেবেলায় পড়ে ফিরবে তখন। দুজনে তো মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। অবশেষে সে এলো। আড়চোখে একবার আমাদের দেখে নিয়ে, যেন চেনে না, এমন ভাব নিয়ে বাড়ির গলিতে ঢুকলো। আমিও পিছু নিলাম। পাড়ার ছেলেরা এখানে ওখানে গুলতানি করছে। পিছু নিয়েছি বুঝতে পারলে দেখে যা আড়ংধোলাই কাকে বলে। যাইহোক আমিও কিং সাইজ সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে উল্টোদিকে মুখ করে হাঁটছি। একেবারে বাড়ির দরজার কাছে এসে আমাকে ডাকলো। আমি দ্রুত গিয়ে তার হাতে চিঠিটা দিতেই ঝট করে ব্লাউজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে বাড়ির কড়া নাড়লো। আমিও ফিরে গিয়ে রিপোর্ট করলাম - কেল্লা ফতে। এমন কত যে স্মৃতি আছে আমার ভাইদার সঙ্গে।
ভাইদা এম,এস,সি, পাশ করার পর বড়জোড়ায় একটা কারখানায় চাকরী পেলো। বিয়ে করলো তার সেই মনের মানুষীকেই। কার্ড পেয়েছিলাম আমি। যেতে পারি নি। এখন ওরা খুবই সুখী দম্পতি।
আমার এম,এস,সি, পড়া এই ভাইদার জন্যই সম্ভব হয়েছিলো। বলবো সেকথা যথাসময়ে।
( আবার আসিবো ফিরে )
ভাইদা এম,এস,সি, পাশ করার পর বড়জোড়ায় একটা কারখানায় চাকরী পেলো। বিয়ে করলো তার সেই মনের মানুষীকেই। কার্ড পেয়েছিলাম আমি। যেতে পারি নি। এখন ওরা খুবই সুখী দম্পতি।
আমার এম,এস,সি, পড়া এই ভাইদার জন্যই সম্ভব হয়েছিলো। বলবো সেকথা যথাসময়ে।
( আবার আসিবো ফিরে )
No comments:
Post a Comment