Tuesday, August 23, 2016

ভাদ্দর দিনে ভাবনা :সঙ্ঘমিত্র মাকুড়

(প্রথম পর্ব )
কদিন প্যাচ প্যাচে বৃষ্টি আর গুচ্ছের গা গুলোন নোংরা জলের স্পেল চলার পর যখন সুজ্যি মামা মিচিক মিচিক করে হেসে জানান দিচ্ছে -আম্মো আছি , ব্যাগ বাগিয়ে অফিসে ঢুকতেই দেখলাম ,মুকুজ্জে দার মেঘ থম থমে বোম্বাই আমের মতো ঝুলে পড়া মুখ খানা !
----আরে কি হলো মুকুজ্জে দা ,যেই না কদিন নাগাড়ে বৃষ্টির পর ,ভাদ্রের রোদ কোহলি র মতো খেলতে নেমেছে ,আর আপনি ওমনি !.....ভালো করে লক্ষ্য করে বলি ----দাদা ,দাঁত নয়তো ?
-----নারে ভাই ,ক্রনিক ব্যাপার ,বৌ !
** ** **
দাঁত খিঁচিয়ে মুকুজ্জে দা যা বলেন তার সার মর্ম বৌদি র হাবভাব ই তার মুখের গভীর নিম্নচাপ আর ঘন্টায় একশো আশি কিমি বেগে ঘুর্নাবাত্য র প্রবল সম্ভাবনার কারন l বৌ আর দুটি কন্যারত্ন l পেছনের জানলা টা খুলতেই এক চিলতে রোদ নাকের ডগায় l আর ওমনি মনে পড়ল যে মুকুজ্জে দার এটা তো সিজিনল রোগ !প্রতি বছরই সে অতি বৃষ্টি হোক আর অনাবৃষ্টি ,যেই বর্ষা টি ছাড়ল মানে পনেরই আগস্ট টি পেরোলো আর পুজোর কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেলো ,অমনি দাদার আমার মুখ ব্যজার হতে শুরু করলো !
** ** **
আরও দুদিন ডিপ্রেশন চলল এরকম l তৃতীয় দিন টিফিন টাইমে আর থাকতে না পেরে আমি বিমল আর সিধু চেপে ধরলাম তোম্বা মুখে রুটি আলুভাজা খাওয়া মুকুজ্জে দা কে ,-----কেস টা কি ,এখনও কিছু বোঝা যাচ্ছে ?
-----না রে ভাই ,খুব গোপনে তিন জনে ; দাদা এমন টোনে কথাগুলো বললেন যেন আইসিসএর নতুন শাখা টি তার ঘরেই খুলেছে !গতিক খুব খারাপ রে ভাই ,গুচ্ছের খবরের কাগজ ,পত্রিকা আর ওই তোদের স্মার্ট ফোন নিয়ে ঘরে দরজা দিয়ে দিচ্ছে !শুধু বুচি মাঝে মাঝে ওর অংক খাতা থেকে পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে !বুচি হলো এইটে পড়া মুকুজ্জে দার ছোট মেয়ে ,বড়টি ফার্স্ট ইয়ার !
আমরা মুখ চাওয়া চায়ি করি ,কি স্বান্তনা দেবো !
---- ছিঁড়ে ছিঁড়ে ,এত দাদা প্লুরাল ,মানে কেস শুধু জন্ডিস নয় একদম এডিস এজিপ্টি!
-----এদিকে আমার তো ইয়ের চুল ছিঁড়ে যাবার অবস্থা !
জিগ্গেস করতে আর সাহস হয়না কিসের চুল সেটা !নাহক মাথার ই হবে l
** ** **

 (দ্বিতীয় পর্ব )
ইস্কুল ফাইনাল পরীক্ষার রেসল্ট বেরুবার আগের অবস্থা এরকম চললো কদিন ধরে l জনি ,বৌদি ঐসময় খুব গোপনে ,সংগোপনে ,পুজোর বাজার মানে শপিং এর লম্বা ফর্দ বানিয়ে চলেছেন কদিন ধরে ,দুই দুহিতা কে নিয়ে l সেই কাগজে সাবর্ণ চৌধুরী দের বাড়ি কাঠামো পুজোর খবর যেদিন ছাপা হয় ,সেদিনই গোপন বইঠকের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায় !গত বারেও অত বড় সত্যিটা গোপন ছিলনা ,ওর হৃদয় ছল ছলিয়ে আমাদের সবাইকার এমনকি অফিসের যে লিফট ম্যান সেউপরসাদ তার ও কান হয়ে কলিজা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছিলো l সে ব্যাটা ও বিকেলে অফিস ভাঙ্গার সময় লিফটে মুকুজ্জে দা উঠলেই অন্যদের শুনিয়ে শুনিয়ে পুছতো খইনি ডলতে ডলতে -----এত বড়া !সত্যি ?
** ** **
এই ভাবে দাদার পালপিটেসন বাড়তে থাকে ,বাড়তেই থাকে l সুন্দরী গোলগাল বৌদির এমনিতে দাদা খুবই নেওটা !কিন্তু পুজোর ঢাকে কাঠিটা পড়ল কি দাদা শাহরুখ খান আর বৌদি মার্কিন কাস্টমস ,কোন বিশ্বেস নেই !একেবারে ফাইনাল পর্যায়ে,বৌদি অ্যান্ড কোঙ্ দয়া করে লিস্টি টি দেখিয়ে কিতাথথ করে একটা এস্টিমেট দাদার কাছে ক্লেম করে বসে l দাদা তখন হাড়িকাঠে গলা ঢুকিয়ে ফেলা অবলা জীবের মতই দার্শনিকতা র নেশায় আচ্ছন্ন থাকে ,দাদার ভাষায় ------মানি বিল রে ভাই ,আমি কোথাকার ছা পোষা প্রণব মুখুজ্জে ,একবার রিফিউজ দুবার রিফিউজ ,তাপ্পর সই তেই হয় ,মানে সই দিতেই হয় আর কি .....
সই বা সায় দিলেই দুই মেয়ে কে বগল দাবা করে বৌদি চলেছে যুধ্ধে!ক্রমশ ক্রমশ যত ফাইনালের দিকে,এগিয়ে যায় পুজো ততই বেরুবার মানে বাজার যুধ্ধের ফ্রিকয়েন্সি বাড়ে !শুনেছি দুএকটা ছুটির দিন দাদা কেও নড়া ধরে টেনে নিয়ে যায় বৌদি ,মুখে বলবে ----আমারও তো একটা পেস্টিজ বলে আছে নাকি ,লাহিড়ি দি ,পাশের পড়ার কুসুম ,সব্বাই কেমন হাজব্যান্ড নিয়ে সাজুগুজু করে শপিং কোচ্ছে,ওগো হ্যাঁগো কোচ্ছে আর আমি কিনা পাশ খালি করে ....l আসল উদ্দেশ্য ,দাদাই বলেছে ------বুঝলিনা ,যদি এক কোপে গলা টা ধড় থেকে না ছাড়ে তবে আরেক কোপ .. ,আর তাছাড়া কুলি টুলি করে বাড়তি পয়সা কে দিতে চায় বল ?
** ** **
শুক্কুরবারেও অবস্থা র বিশেষ উন্নতি দেখলাম না !মুকুজ্জের মুখ লাল পিলা হয়েই চলেছে ,জিগ্গেস করতে দেখলাম পুরো মেন্টাল !বললো -----আমি শালার পেছন ফুটো আন্ডারপ্যান্ট পরে তিন মাস চালাচ্ছি আর মাগীরা কিনা লম্বা চওড়া লিস্টি ,আজ গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো করেই ছাড়বো দেখেনিস ,তানা শাহী নেহি চলেগা বাবা !বলতে বলতে হাঁটা দিলো l
সিধু অস্ফুটে বললো দুগ্গা দুগ্গা !
** ** **
 (শেষ তথা আন্ডার প্যান্ট পর্ব )
সোমবারের শ্যাওড়াফুলী লোকাল ঠেঙ্গিয়ে অফিসে ঢুকতে লেট হয়ে গেলো l তার ওপর ভাদ্রের চিড়বিড়ানী গরম l ঢুকে দেখি মুকুজ্জে দার টেবিলে র সামনে ছোট খাটো ভিড় ,আর ফাঁকে ফোকরে নজরে আসছে দাদার উজ্জল মুখ খানি l কি কেস রে সিধু ?এত ব্যাপক চেঞ্জ !বলতে বলতে যথা সময়ে নাক গলাই আমি l মুকুজ্জে দার এত মেঘমুক্ত ঝলমলে মুখ গত এক হপ্তায় নজরে আসেনি l 
----কি করে হলো ?
----এবার তাহলে নো লিস্টি !
দাদা বেশ মৌজ করে একটা চোখ আধবোজা রেখে রামদেব স্টাইলে বললো ,-----লিস্টি তো আছেই , সেই পেছন ফাটা আন্ডারপ্যান্ট দেখিয়েই কামাল !হুঁ হুঁ বাওয়া !
আমরা হতবাক !ফিচেল সিধু বললো -----সেকী দাদা ,ওই প্যান্ট পরে আপনি বৌদির সামনে ,সে না হয় হোক ,কিন্তু ঘরে আপনার দু দুটি সোমথথ মেয়ে ,তাদের সামনে ....
------আরে না রে বাচ্চু !ঘরে বর্ষায় কাপড় মেলবার জন্য যে তার টাঙ্গানো আছে ,তাতে বেশ খোলসা করে টাঙ্গিয়ে দিলাম ,আর তাতেই সিদ্ধি লাভ ! বলে বেশ মাতব্বরি চালে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো আমাদেরই ------সব পুজোর আগে কোন্ পুজো হয় ,বলতো ?
বললাম------ গণেশ !গণেশ !কিন্তু লিষ্ট কি এবার সংক্ষিপ্ত? ,মাসির শাশুড়ি ,শালীর ননদ ,তস্য ভাজ ,নেই নাকি ?পিঙ্গা পিঙ্গা লাহাঙ্গা ,চতুষ্কোণ টপ ,জামাই চারশোবিশ জিন্স ...বাপের জন্মে না শোনা নাম গুলো আমি এক নিশ্বাসে আওড়ে ফেলি l দাদা দেবদিদেব মার্কা হাসি দিয়ে টেবিলের তলায় ব্যাগ হাতড়ে বার করে দু পাতার লিষ্ট !সেই ! সেই ! হুমড়ি খেয়ে পড়ি আমরা --লিষ্ট দেড় পাতা ,বুচি র খাতার পাতায় ,একদম উপরে লেখা জ্বল জ্বল করছে বুচিরই হাতে র "বাবার নোতুন আন্ডারপ্যান্ট "
-----মানে ?
-----রাহু ধৈর্যঙ্!দাদা বুক খানা ঢাউস করে শেষ বাক্যটি ছাড়েন ----- তোদের বৌদি কথা দিয়েছে আমার ওই বস্ত্র টি না কিনে পুজো শপিং শুরু করবেনা ,যেমন সব পুজোর আগে সিধ্ধি দাতায় নমহ্ !
ঝপাঝাপ করে আমাদের কিউরিওসিটি র পারদ গুলো নামতে থাকে এবার l তবুও গলা ঝেড়ে জিগ্গেস করি ----ব্যাস এতেই আপনি খুশ ?
এবার দাদার অন্য মূর্তি ,বলে ------আচে !আরো আচে !চোখ গুরুদেবের মতই ,টিউব লাইটের স্টার্টার এর মতো মিট মিট করে ------কাল বুচি তো ওর দিদির সাথে শুলো ,বলেই আবার চোখ পাকায় ------যাও যাও , তোমরা সবাই এখনও ছাঁদনা তলায় যাওনি, এসব কথা তোমাদের শুনে কাজ কি ?
এর পর মুকুজ্জে চর্চা আর জমে না
** ** **
মুকুজ্জে বৌদি যে কোন্ কোন্ অস্ত্রে কুপোকাত করেছেন দাদা টিকে ,ভাবতে ভাবতে নিজের টেবিলে ফিরে আসি l পেছনে পেছনে বিমল ,বাঁকড়ো না বীরভূম দেশের আদত বাসিন্দা ,বলে ওঠে -----ইয়াদের কি হবেক গো !
ভাববার কথাই !
স . মা

No comments:

Post a Comment