ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা বন্দেমাতরম মন্ত্র বা স্তোত্রটির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা আন্দোলন আর বন্দেমাতরম - এদুটিকে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়। স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে এই স্তোত্রটিকে ঘোষণা করা হয়।
১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র মালদহে ডেপুটি কালেকটর পদে কর্মরত ছিলেন। ওই বছর আশ্বিনমাসে দুর্গাপূজার ছুটিতে কাঁঠালপাড়ার বাড়িতে এসে নিজের বাড়ির দুর্গাপূজায় যোগদান করেন। ওই সময় তিনি 'আমার দুর্গোৎসব' লেখেন এবং বন্দেমাতরম গানটি রচনা করেন। সেই সময় বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সঙ্গীতশিক্ষক যদুনাথ ভট্টাচার্যকে দিয়ে গানটির সুরারোপ করান। এই যদুনাথ ভট্টাচার্য হলেন বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রবাদপুরুষ ধ্রুপদিয়া ও পাখোয়াজী যদু ভট্ট মহাশয়। তিনি কাফি রাগে ত্রিতালে এই গানের সুর করেন এবং ঘরোয়া আসরে প্রথম গেয়ে শোনান। পরে বঙ্কিমচন্দ্র মল্লার রাগে এই গানটিতে সুর সংযোজন করেন ও আনন্দমঠ উপন্যাসে অন্তর্ভুক্ত করেন।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১-৩ মার্চ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
বাঁকুড়া সদর শহরে অবস্থান করেন। এসময়
৩- রা মার্চ সকালে বাঁকুড়ার ছাত্র-ছাত্রী সমাজ কবিকে অভ্যর্থনা জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সভার প্রথমেই ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রামাফোন রেকর্ডের বহুল প্রচারিত একটি মার্চ্চিং সুরে বন্দেমাতরম গানটি পরিবেশন করে। কবিগুরু তাঁর ভাষণে প্রথমেই বলেন- 'এই যে 'বন্দেমাতরম' সঙ্গীতটি গাওয়া হ'ল এর প্রত্যেকটি লাইন প্রত্যেকটি শব্দ অশুদ্ধভাবে উচ্চারিত হ'ল। আজ তোমরা এই জাতীয় সঙ্গীতের মূল বাহন সংস্কৃত ভাষার অবমাননা করেছ।--- বিশেষত স্তুতিমন্ত্রে এ রকম বাণীবিকারকে অপরাধ ব'লেই গণ্য করা উচিৎ'। আজও এই গানটি যখনই গাওয়া হয় তাতে উচ্চারণের অজস্র ভুল থাকে। 'খর করবালে' - হয়ে যায় 'কলকল বাহে'। সুরের কথা আর বেশি না বলাই ভালো। ইদানিং আবার সর্বত্র লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গানটি বাজানোর রীতি চালু হয়েছে। সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ!! নইলে কি আর ভারতবর্ষ হয়ে যায় India!!!
বাঁকুড়া সদর শহরে অবস্থান করেন। এসময়
৩- রা মার্চ সকালে বাঁকুড়ার ছাত্র-ছাত্রী সমাজ কবিকে অভ্যর্থনা জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সভার প্রথমেই ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রামাফোন রেকর্ডের বহুল প্রচারিত একটি মার্চ্চিং সুরে বন্দেমাতরম গানটি পরিবেশন করে। কবিগুরু তাঁর ভাষণে প্রথমেই বলেন- 'এই যে 'বন্দেমাতরম' সঙ্গীতটি গাওয়া হ'ল এর প্রত্যেকটি লাইন প্রত্যেকটি শব্দ অশুদ্ধভাবে উচ্চারিত হ'ল। আজ তোমরা এই জাতীয় সঙ্গীতের মূল বাহন সংস্কৃত ভাষার অবমাননা করেছ।--- বিশেষত স্তুতিমন্ত্রে এ রকম বাণীবিকারকে অপরাধ ব'লেই গণ্য করা উচিৎ'। আজও এই গানটি যখনই গাওয়া হয় তাতে উচ্চারণের অজস্র ভুল থাকে। 'খর করবালে' - হয়ে যায় 'কলকল বাহে'। সুরের কথা আর বেশি না বলাই ভালো। ইদানিং আবার সর্বত্র লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গানটি বাজানোর রীতি চালু হয়েছে। সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ!! নইলে কি আর ভারতবর্ষ হয়ে যায় India!!!
রবীন্দ্রনাথের 'জনগণমন' গানটি বর্তমানে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। কংগ্রেসের এক অধিবেশনে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এই গানটি গেয়ে শোনান। গানটি উচ্চ-প্রশংসিত হয়। পরে এই গানই ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সব বিদ্যালয়ে প্রার্থনাসভায় গানটি গাওয়া হয়। এই গানটিও ছাত্র-ছাত্রীরা এবং অনেকেই ভুল উচ্চারণে গায়। গানটি গাওয়া হলে যে উঠে দাঁড়াতে হয়, সাবধান অবস্থায় দাঁড়াতে হয় তা অনেকেই জানেন না। আবার অনেক শিক্ষিত মানুষ জানলেও তা পালন করেন না। এসব দিকে ধ্যান না দেওয়া, না মানাটাই রীতি হয়ে গ্যাছে।
গানটি নিয়ে কবিগুরুকে কম অপমান সহ্য করতে হয় নি। অনেকেই সিদ্ধান্ত করেন যে-ভারত ভাগ্য বিধাতা - বলতে তিনি ব্রিটেনের মহারাণীর প্রতিনিধি বড়লাটকে বুঝিয়েছেন। এইভাবে তিনি বড়লাটের পায়ে তৈলমর্দন করেছেন। আজও অনেকে এই কথাই বলে। কবিগুরু নিজে বলেছেন যে ভারত ভাগ্য বিধাতা বলতে তিনি পরমপিতা ব্রহ্মের কথাই বলেছেন। কেই বা শোনে সে কথা। আজও অনেকে বলেন - ওই গানটা ইংরেজদের পা চাটার জন্যই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই তো আমাদের স্বাধীনতা!!
আজকাল আবার জাতীয় সঙ্গীতের বদলে 'সারে জাঁহা সে আচ্ছা' গানটি অনেক অনুষ্ঠানেই গাইতে শুনি। এই গানটি একটি অসাধারণ রচনা এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কবি ইকবালের এই গানে অসাধারণ সুরারোপ করেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। এই গানটিও স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি অন্যতম মূলমন্ত্র। তথাপি জনগণমন কে যখন জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তখন তা রক্ষা করার দায়টাও আমাদেরই। কবে যে আমাদের সেই বোধোদয় ঘটবে!!
No comments:
Post a Comment